ঢাকা,

১১ জুলাই ২০২৫


জবির দুই শিক্ষক ও বাগছাসের নেতাদের ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে ছাত্রদলের হামলা

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ০০:৪৫, ১১ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ০০:৪৯, ১১ জুলাই ২০২৫

জবির দুই শিক্ষক ও বাগছাসের নেতাদের ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে ছাত্রদলের হামলা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটককে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক ও বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জবি শাখার আহবায়ক ও মুখ্য সংগঠককে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। (বৃহস্পতিবার) বিকেল চারটায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের নিচে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাফিক বিন সাদেক রেসাদের ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দুপুরের দিকে বিভাগে আটক করতে যায়।

এরপর তাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করলে বিভাগের শিক্ষকেরা পরিস্থিতি শান্ত করে মিমাংস করেন। এরপর পুনরায় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাকে আটক করতে আসলে ওই বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রকল্যান পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক কে.এ. এম. রিফাত হাসান এবং সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম এগিয়ে আসলে তাদের গালিগালাজ ও হামলা করে ছাত্রদলের নেতকর্মীরা।

এছাড়া বাগছাসের নেতাকর্মীরা আসলে তাদের ওপর হামলা করে মারধর শুরু করেন তারা। এ-সময় জবি শাখা বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহবায়ক ফয়সাল মুরাদ ও মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্ফাদ ফারুক আহত হয়। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

হামলার শিকার হওয়া জুলাই গনঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ গনতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ বলেন, জবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন ও যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদের নেতৃত্বে আমি সহ আমাদের আহবায়ক ফয়সাল মুরাদ সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক রিফাত হাসান সহ ম্যানেজমেন্ট ডিপার্ট্মেন্টের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে সন্ত্রাসী হালমা চালিয়েছে। আমরা এ হামলার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তাদের বহিষ্কার দাবি করছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের এক জুলাই যোদ্ধাকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান এর নেতৃত্বে প্রথমে হামলা চালায়।

পরে তাকে শিক্ষকদের সহায়তায় বাঁচাতে আসলে আমাদের উপর হামলা করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যান পরিচালক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কে এ এস রিফাত হাসান ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম স্যার সহ বাগছাস জবি শাখার আহবায়কের উপর হামলা চালায়। আমি এই হামলার বিচার চাই সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক কে শহীদ সাজিদ ভবনের নিচে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান ও শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে হামলার শিকার হচ্ছিলেন। আমি সামনে গিয়ে তাদের বলি, 'ভাই, ফারুক জুলাই আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী।

১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় তার মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছিল। তাকে ছাত্রলীগ হিসেবে ট্যাগ দিয়ে এভাবে মারধর করা ঠিক নয়।' কিন্তু আমার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা তাকে মারধর করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ১২ থেকে ১৩ জন যদি ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তবে আমি তাদের একজন ছিলেন। ২৮ অক্টোবর ২০১৩ সালে পল্টনে গুলি খেয়েছিলেন। সেই আমাকেও ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে লাথি ও ঘুসি মারা হয়েছে। শামসুল আলীফিনের নেতৃত্বে তার কর্মীরা আমাকে আমাকে কিলঘুষি মেরেছে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রদলের যারা আমার এবং আমার জুলাইয়ের সহযোদ্ধাদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিচার করতে হবে তারা প্রত্যেকে অছাত্র। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দলের নামে অছাত্ররা সন্ত্রাস কায়েম করছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ট্র্যাকিং দিয়ে জুলাইয়ের আহত সহযোদ্ধাদের উপর হামলা চালাচ্ছে। জুলাইয়ের গুলিবিদ্ধ ফেরদৌস হাসানকে ঘিরে ধরে সবাই মিলে পিটিয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। আমাদের স্যাররা যখন আমাদের রক্ষার্থে এসেছে তখন তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। গালিগালাজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এগুলো পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, আজকে আমরা জানতে পারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রবেশ করেছে। এরা বিভিন্ন সময় ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছে ক্যাম্পাসে ঢুকবো এবং অরাজকতার সৃষ্টি করবে। এর আগে সাজিদ নামে একটি ছেলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল এবং ক্যাম্পাসে এসেছিল তারই অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে এসে সংঘটিত হচ্ছে। এবং বিভিন্ন ধরনের অরাজকতার পায় তারা চালাচ্ছে। আজকে যারা এদের মাধ্যমে আহত হয়েছে আঘাতের শিকার হয়েছে তারা এসে যখন এদের ধরতে যাই তারা উল্টা তখন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করে।

সহকারী প্রক্টর মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হ্যাঁ, আমার গায়ে হাত তুলেছে এটা সত্য। তবে তার রাজনৈতিক পরিচয় আমি অনিশ্চিত। সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই সব পরিষ্কার হওয়া যাবে। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছি। দুইপক্ষ যখন দুদিক থেকে মারামারি করছিল, তখন আমি সহকারী প্রক্টর হিসেবে তাৎক্ষণিক সমাধান করতে গেলে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে একজন আমার ওপর হামলা করে। আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যারকে জানিয়েছি। লিখিত অভিযোগও দিব আমি।

ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ঘটনা শোনা মাত্রই আমরা পুরো প্রক্টরিয়াল বডি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। এ মুহুর্তে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিষয়টি সুরাহা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র অধ্যাপকের সিদ্ধান্ত সবার মেনে নেয়া ছাড়া কোন বিকল্প থাকতে পারে না। এ ঘটনায় পূর্বাপর বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে।

টিএইচ

News