
আজ ছিল পূর্ণিমা, স্থানীয় লোকজন বলে, এসালা ফুলমুন পোয়া। প্রতি মাসে এদিনে ছুটি মেলে। তাই সকালে শহরের রাস্তায় নেচেগেয়ে প্রার্থনা করে সন্ধ্যার ক্যান্ডি পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামমুখী হয় স্থানীয় লোকজন। ম্যাচজুড়েও গ্যালারিতে দুলে গেল দর্শক।
বাংলাদেশকে ১৫৪ রানে আটকে রেখে কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কার তাণ্ডবে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচের বাইরে বাংলাদেশ। ৬ ওভারে ৮৩ রান তুলে ফেলা স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জিতেছে এক ওভার বাকি থাকতে।
পাল্লেকেলের উইকেটে দেড় শর আশপাশের রান নিয়ে লড়াই করা যায় না। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সেটি বুঝিয়েছেনও।
তাঁরা বিচ্ছিন্ন হন পঞ্চম ওভারে, ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে রান ৭৮। অথচ এমন উইকেটে কিনা ১০ নম্বরে পেসার অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনকে নিয়ে ব্যাটিং সাজাতে হলো বাংলাদেশকে! পারভেজ ও তানজিদ হাসান তামিম ৫ ওভারে ৪৬ রান তুলে দেওয়ার পরও যদি এই চেহারা হয় স্কোরবোর্ডের, তাহলে এত এত ব্যাটার খেলিয়ে লাভ কী?
ব্যাটিংয়ের লেজ লম্বা করতে গিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানকে একাদশে রাখেনি বাংলাদেশ। তাঁর জায়গায় খেলানো হয়েছে সাইফউদ্দিনকে, যিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনিয়মিত। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মুস্তাফিজ পরীক্ষিত।
১০ ওভার টানা ‘কাটার’ দেওয়ার শক্তি তাঁর নেই। ওয়ানডে সিরিজে বাজে প্রদর্শনীর কারণ এটা। কিন্তু কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে মুস্তাফিজের ৪ ওভারের ওপর বাজি ধরা যেত। চোট নেই, ম্যাচের আগে বোলিং করতে দেখা গেছে তাঁকে। তার মানে, বাদ দেওয়া হয়েছে মুস্তাফিজকে।
টি-টোয়েন্টির বৈশ্বিক তারকাকে বেঞ্চে বসিয়ে হয়তো একটা বার্তাও দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট যে, কারোর জায়গা আরাম কেদারা নয়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি বিবেচনায় খুবই সাহসী সিদ্ধান্ত। কিন্তু ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, সাহসী এই দলটি কেন বিশেষজ্ঞ বোলারের সংখ্যা কমিয়ে ব্যাটিং ভারী করল।
অবশ্য না করে উপায়ও ছিল না, অধিনায়ক লিটন দাসের যে করুণ অবস্থা! তরুণ দুই ওপেনারের ঝড় থামার পর তিনি ক্রিজে এসেছেন ধীরগতিতে, পা আর ব্যাট নাড়িয়েছেন আরো ধীরে এবং পরিণতিতে এলবিডব্লিউ। আবার ধীরগতিতে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে একটি ‘রিভিউ’ও সঙ্গে নিয়ে গেছেন অধিনায়ক। জেফ্রি ভ্যান্ডারসের গুগলি পড়তে পারেননি লিটন। অনন্যোপায় অধিনায়ক কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শেষরক্ষার জন্য ‘রিভিউ’ নেন, যা প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছিল।
এরপর যা হয়, মাঝপথে শেষের গন্তব্য দেখতে থাকে বাংলাদেশ দল। ৪ বল পর মাহিশ থিকসানাকে লং অফ বাউন্ডারির বাইরে আছড়ে ফেলতে গিয়ে আউট হন ২২ বলে ৩৮ রান করা পারভেজ। ততক্ষণে অবশ্য ক্রিজে যোগ দিয়েছেন পরিচয়ে ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। প্রায় তিন বছর পর টি-টোয়েন্টিতে ফেরা এই বাঁহাতির স্ট্রাইকরেট দেখলে মনে হবে, তিনি বুঝি এক প্রান্ত আগলে রাখার দায়িত্ব নিয়ে নেমেছেন! মেহেদী হাসান মিরাজ উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন মিড অফে। এঁদের মাঝখানে অর্থহীন ব্যাটিং করে ফিরে গেছেন তাওহীদ হূদয়।
ততক্ষণে বাংলাদেশ ইনিংসের আয়ু বাকি মাত্র ১৫ বল, রান ১৩৫। দুই ছক্কায় ৫ বলে ১৪ রান তুলে বাংলাদেশকে টেনেটুনে পাস করিয়েছেন শামীম হোসেন। তো, শ্রীলঙ্কা কি দুর্দান্ত বোলিং করেছে? লেন্থ বল আর উইকেট সোজা বোলিং যদি বিভীষিকাময় মনে হয় কোনো দলের, তাহলে আর কি বলার কিছু থাকে না। লঙ্কান ওপেনারদের ‘লা জবাব’ ব্যাটিংয়ে নির্বাক মনে হয়েছে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণকেও! বিবর্ণ বোলিং পর্বে একমাত্র দর্শনীয় ঘটনা শামীমের দুর্দান্ত ক্যাচ, যা মেন্ডিসকে থামিয়েছে ৭৩ রানে।
টিএইচ