জুলাই সনদ দেশের ভবিষ্যতের রূপরেখা: প্রধান উপদেষ্টা 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই সনদ’ শুধু একটি ঘোষণাপত্র নয়, এটি বিভাজন দূর করে দেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ নির্মাণের রূপরেখা। তিনি বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট ও বিভক্তি কাটিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে এই সনদ।

সোমবার (২ জুন) রাজধানীতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপে সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি প্রতিদিন বহু বৈঠকে অংশ নিই, তবে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পাই এই সংলাপে। আপনাদের সঙ্গে বসে কথা বলার মধ্য দিয়েই আমরা দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করছি এটা আমাকে শিহরণ জাগায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বহু বিষয়ে একমত হতে পেরেছি, আরও কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে একটু দূরত্ব আছে। তা ঘুচিয়ে ঐকমত্যের সুপারিশে যুক্ত করলে এটি হবে একটি পরিপূর্ণ জাতীয় সনদ, যা আমাদের গর্বের অংশ হবে।’

সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, বাসদ, সিপিবি, এনসিপি, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ প্রায় দুই ডজন রাজনৈতিক দল ও দুটি জোট অংশ নেয়।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রথম দফায় যেসব বিষয়ে দূরত্ব ছিল, এবার সে দূরত্ব কমিয়ে এনে সনদে আরও বিষয় যুক্ত করা হবে যাতে এটা সত্যিকারের ‘জাতীয় ঐক্যের দলিল’ হয়ে দাঁড়ায়।’

প্রসঙ্গত, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্বের সংলাপ চলেছে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। সেখানে ৩৩টি দল ও জোটের সঙ্গে মোট ৪৫টি বৈঠক হয়। দ্বিতীয় দফার আলোচনায় সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আরও গভীর ঐক্য গঠনের চেষ্টা চলছে।

ঐক্যজোটকে শেষ মুহূর্তে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সংলাপে উপস্থিত ছিলেন—

* বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, রুহুল কুদ্দুস কাজল
* জামায়াত: ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ
* গণসংহতি আন্দোলন: জোনায়েদ সাকি
* গণঅধিকার পরিষদ: নুরুল হক নুর
* সিপিবি: সাজেদুল হক রুবেল
* বাসদ: বজলুর রশিদ ফিরোজ
* এনসিপি: নাহিদ ইসলাম, আখতার হোসেন
* নাগরিক ঐক্য: সাকিব আনোয়ার
* এবং আরো অনেকে

সংলাপে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, জুলাই সনদ জাতিকে এক করার লক্ষ্যে একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে।

এই উদ্যোগে দেশের জনগণ, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত অংশগ্রহণই পারে একটি সমতার, সংহতির ও স্থিতিশীল বাংলাদেশের ভিত্তি রচনা করতে।