ঢাকা,

১৪ আগস্ট ২০২৫


তিন মাসের মধ্যে মাসিক নিয়মিতকরণ উপকরণ ও ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ২২:০৬, ১৩ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ২৩:২৪, ১৩ আগস্ট ২০২৫

তিন মাসের মধ্যে মাসিক নিয়মিতকরণ উপকরণ ও ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব

নীতিগত ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এমআরএম কিটের ঘাটতি থাকায় পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও অনিরাপদ গর্ভপাত রোধে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি। তবে আগামী তিন মাসের মধ্যে মাসিক নিয়মিতকরণ উপকরণ ও ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।’

নারীপক্ষ আয়োজিত ‘নীরবতা ভাঙা: সহজলভ্য ও মর্যাদাপূর্ণ মাসিক নিয়মিতকরণ সেবা’ বিষয়ক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা)। 

আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর  ওয়াইডব্লিউসিএ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন নারীপক্ষ'র সভানেত্রী গীতা দাস। প্রধান অতিথি  ছিলেন বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, ' ন্যাশনাল ট্রাজিটি ফর স্কেল আপ অফ রেগুলার কেয়ার' বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এমসিএইচ- সার্ভিসেস ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এ এন্ড আরএইচ) ডাঃ মোঃ মনজুর হোসেন, আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সৈয়দ আখতার রুবায়েত, ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার (মা, নবজাতক, শিশু ও কৈশোর স্বাস্থ্য) ড. মোঃ নুরুল ইসলাম খান।

এছাড়া প্যানেল আলোচনায়  অংশ নেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মৎ জোবায়দা বেগম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফি আহমেদ এনডিসি, মহিলা বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি ফেরদৌসি বেগম, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি আহমেদ এহসানুর রহমান, ডব্লিউএইচও এর কান্ট্রি প্রতিনিধি ডা. আহমেদ জামশেদ মোহাম্মদ, ওজিএসবি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. ফারহানা দেওয়ান, মেরী স্টপস বাংলাদেশের মোসাম্মৎ মনজুন নাহার। সভাটি সঞ্চালনা করেন  প্রকল্প পরিচালক ডা. নিলুফার পারভীন।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন  নারীপক্ষ’র সদস্য এবং থিম লিডারের (নারীর স্বাস্থ্য ও অধিকার)  তাসনিম আজিম । এছাড়াও সভায় স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এর প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন এর প্রতিনিধি, সিএসও প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী এবং নারীপক্ষ'র সদস্য ও কর্মীবৃন্দ সহ মোট ৭০ জন  উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা সায়েদুর রহমান আরো বলেন, কিছু নীতিগত ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এমআরএম কিট সরবরাহ না থাকার কারণে পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও  অনিরাপদ গর্ভপাত রোধে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন সম্ভব হয় নি। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সমন্বিতভাবে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে।

তিনি আরও বলেন, মাসিক নিয়মিত করণের ওষুধ সরবরাহে ওষুধ বিক্রেতাদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে আরও ভাবার প্রয়োজন আছে, কারণ যথাযথ প্রশিক্ষণ, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় তাদের যুক্ত করা ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, নানাবিধি সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আগামী ৩ মাসের মধ্যে মাসিক নিয়মিতকরণ উপকরণ এবং ওষুধ এর সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন।

এছাড়া তিনি আশ্বাস দেন , জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনসমূহের কার্যক্রম ও গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে যে সকল সুপারিশ উঠে এসেছে তা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের রূপান্তর পরিকল্পনায় যুক্ত করা হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের পরামর্শ আহ্বান করেন।

ডাঃ মোঃ মনজুর হোসেন বলেন,  তরুণ তরুণীদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির চাহিদা রয়েছে। তাদের মধ্যে গভপাতের হার ৩৫ শতাংশের বেশি। যা আমাদের চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। কারণ আমাদের দেশের তরুণ তরুণীদের যৌন আচরণ নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। তবে বাংলাদেশের কিশোর কিশোরীদের মধ্যে যাদের অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সম্পর্ক হয়েছে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেশি লক্ষ্য করা যায়। 

গীতা দাস বলেন, এম আর নিয়ে জাতীয় - আন্তর্জাতিক নিদের্শিকা তৈরি হয়েছে। সেই নিদের্শিকার আলোকে গর্ভবতীদের মাসিক নিয়মিতকরণ সেবা, মর্যাদাপূর্ণ,  নিরাপদ এবং সুলভ হয়। এমআরএরের সমস্যা গুলো উত্তরণের উদ্দেশ্যেই আমরা সম্মিলিত ভাবে কাজ করবো।

ড. সৈয়দ আখতার রুবায়েত বলেন, দেশে ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা রয়েছে।  এর মধ্যে ৩ কোটি ৬০ লাখ নারী রয়েছে। এই চাহিদা অনুযায়ী পরিবার পরিকল্পনা কাযক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ কাযক্রম। 

ফেরদৌসি বেগম উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীর স্বাস্থ্যের উপর যে প্রভাব পড়ে তা তুলে ধরেন। 
আলোচনায় বক্তারা সমন্বিত মাসিক নিয়মিতকরণ সেবা বিস্তারের জন্য জাতীয় কৌশল; উপকরণের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের হার পরিবর্তনের পূর্বাভাস তৈরি এবং ডব্লিউএইচও মাসিক নিয়মিতকরণ সেবা  নির্দেশিকা ইত্যাদি বিষয়গুলো  তুলে ধরেন।

এছাড়া বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এমআর সেবা প্রাপ্তিতে নারীরা যে সকল বাধার মুখে পরেন তা শেয়ার করা, বর্তমান তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের সম্ভাবনা বোঝা। নিরাপদ এমআর সেবা পাওয়ার জন্য বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা শেয়ার করা। সীমাবদ্ধতা সমূহ দূর করার সম্ভাব্য উপায় চিহ্নিত করা ইত্যাদির উপর জোর দেন।

টিএইচ

News