ঢাকা,

১৬ জুলাই ২০২৫


মৌলিক সংস্কারে বাধা সৃষ্টি করছে বিএনপি : এনসিপি

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ২১:২৮, ১৫ জুলাই ২০২৫

মৌলিক সংস্কারে বাধা সৃষ্টি করছে বিএনপি : এনসিপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান সংলাপে সব দলগুলো ছোটখাটো সংস্কার প্রস্তাব মেনে নিলেও মৌলিক সংস্কারের বিষয়গুলো উত্থাপন হলেই বিএনপি ও গুটিকয়েক দল সেখানে বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

তিনি বলেছেন, তারা (বিএনপি) ঐকমত্যের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। শুধু তাই নয়, মৌলিক সংস্কারের এজেন্ডাগুলো যেন ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে না থাকে, তার পরিবেশ তৈরি করছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ১৪তম দিনের আলোচনা শেষে এনসিপির সদস্য সচিব এসব কথা বলেন। তবে, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য রাস্তায় নামতে হলেও এনসিপি নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আখতার।

তিনি বলেন, বিশেষ করে সংবিধানের প্রস্তাবনা— অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং নতুনভাবে সংযোজনযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ (৫৮(খ), ৫৮(গ), ৫৮(ঘ)) যদি ভবিষ্যতে সংশোধন করতে হয়, তা গণভোটের মাধ্যমে পাশ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সংবিধান সংশোধনের জন্য নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের প্রস্তাব করা হয়েছে এনসিপির পক্ষ থেকে। তবে, বিশেষ অনুচ্ছেদগুলোর ক্ষেত্রে গণভোটের আবশ্যকতা আমরা চেয়েছি।

সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবে এনসিপি পিআর (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) পদ্ধতি চায় উল্লেখ করে আখতার বলেন, কোনো দল এক শতাংশ ভোট পেলেই যেন উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায়। এতে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পাবে।

তবে আখতার হোসেন অভিযোগ করেন, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি নিয়ে অধিকাংশ দল একমত হলেও বিএনপি ও গুটিকয়েক দল পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করছে। শুধু তাই নয়, উচ্চকক্ষের প্রস্তাবের আলোচনার বিষয়টিও সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বাইরে রাখার চেষ্টা করছে কোনো-কোনো দল।

তিনি বলেন, সংস্কারের জায়গাগুলোকে সংখ্যাতাত্ত্বিক আলোচনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ২০টি প্রস্তাবের মধ্যে আমার ১২টি মেনে নিয়েছি, ৮টি মানি না। কেন সবগুলো মানতে হবে, এমন একটা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ছোটখাটো সংস্কার প্রস্তাবনা সব দল মেনে নিয়েছে। কিন্তু যখন মৌলিক সংস্কারের জায়গায় এসেছে, অর্থাৎ যখন সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে একটি সমন্বিত নিয়োগ কমিটির কথা আসছে, তখন তারা (বিএনপি) বেঁকে বসছে। যখন উচ্চকক্ষে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের প্রশ্নে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা আসছে, তখন তারা সেখান থেকে সরে আসছে। মানে হচ্ছে, রাষ্ট্রের ভাঙা পায়ে ব্যান্ডেজ করলেও হাড় জোড়া লাগার প্রশ্নে বেঁকে বসেছেন। তাদের কথা হচ্ছে, ব্যান্ডেজ করেছি এটা মেনে নাও, হাড় জোড়া লাগাতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে এনসিপি কোনো ছাড় দেবে না বলেও উল্লেখ করেন আখতার। তিনি বলেন, এইগুলো টেবিলের আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে। আর যদি মৌলিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করা হয়, মৌলিক সংস্কারবিহীন জুলাই সনদের দিকে অগ্রসর করা হয় তাহলে জনগণের প্রত্যাশার জায়গা পূরণ হবে না। সেক্ষেত্রে টেবিলের বাইরে মাঠপর্যায়ে সংস্কারের এজেন্ডা ঠিক করার পরিস্থিতি কেউ তৈরি করলে আমাদের সেই পথে অগ্রসর হতে হবে।

মৌলিক সংস্কার বলতে এনসিপি কী বোঝাচ্ছে— জানতে চাইলে আখতার বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাহী ক্ষমতা কতটুকু প্রয়োগ করতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া কী হবে, উচ্চকক্ষের গঠন ও কার্যাবলি কী রকম হবে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় প্রভাবের বাইরে যেন নিরপেক্ষ নিয়োগ হয়; তার জন্য সমন্বিত নিয়োগ করার বিষয়গুলো আমরা মৌলিক সংস্কারের মধ্যে রেখেছি।

তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এনসিপি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও গঠনতন্ত্র জমা দিয়েছে। কমিশনের কিছু পর্যবেক্ষণ ইতোমধ্যে তারা পেয়েছে এবং দ্রুত সংশোধিতভাবে তা দাখিল করা হবে।

টিএইচ

News