
ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন আদালত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগামী তিন মাসের মধ্যে ‘জুলাই রেভুলেশন-২০২৪’ শিরোনামে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ের মূল নির্দেশনা
বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী:
-
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনটি ‘ঐতিহাসিক দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
-
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গবেষণা ও জ্ঞান আহরণের জন্য প্রতিবেদনটি সংরক্ষণ করতে হবে।
-
মামলাটিকে চলমান মামলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ।
রায়ের পটভূমি
২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। এতে ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখা এবং জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশনা চাওয়া হয়। প্রাথমিক শুনানির পর ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে, যেখানে সরকারকে ব্যাখ্যা করতে বলা হয় কেন নিরীহ মানুষ হত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিচারের নির্দেশ দেওয়া হবে না।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (OHCHR) একটি তথ্যানুসন্ধান দল ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন তৈরিতে গুরুতর আহত এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলা হয়। প্রতিবেদনটি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনে যুক্ত করা হয়।
রায় ঘোষণায় বিলম্ব
এই রুলের ওপর রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিন ছিল ২০২৫ সালের ৩ আগস্ট। তবে রাষ্ট্রপক্ষের সময় চাওয়ায় রায় ঘোষণা পিছিয়ে যায় এবং最终 ২১ আগস্ট রায় দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনের তাৎপর্য
আদালত প্রতিবেদনটিকে ভবিষ্যৎ গবেষণা ও প্রজন্মের জ্ঞান আহরণের জন্য অপরিহার্য দলিল বলে আখ্যায়িত করেন 4। এই রায়ের মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিষয়টি ইতিহাসের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেল। আদালতের আশা, এ উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সত্য জানার সুযোগ দেবে এবং গণহত্যার দায়ীদের বিচারের পথে নতুন দিক উন্মোচন করবে।
ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদনটি ‘জুলাই রেভুলেশন-২০২৪’ নামে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া, গণহত্যার দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিক্রিয়া
এই রায়কে ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা। এটি বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ইউ