
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লেখা নিবন্ধ মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রথম জেনারেশন জেড বিপ্লবটি বাংলাদেশের তরুণদের হাত ধরেই শুরু হয়েছে, যা বিশ্বে তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ইউটাহভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ডেসেরেট নিইজের সেই নিবন্ধটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়া, সংস্কারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
ড. ইউনূস লিখেছেন, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের হাজারো শিক্ষার্থী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে একনায়ক-স্বৈরশাসককে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্রনেতারা তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে আহ্বান জানান। প্রথমে তিনি রাজি না হলেও, তরুণদের আত্মত্যাগের কথা ভেবে দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন। ৮ আগস্ট তিনি নীতি বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের নেতাদের নিয়ে শপথ নেন।
সরকারি চাকরিতে সমতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই আন্দোলন পরিণত হয় বিশ্বের প্রথম জেনারেশন জেড বিপ্লবে। ইউনূস বলেন, ‘এই তরুণরা প্রমাণ করেছে যে জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, যুদ্ধ ও বেকারত্বের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারাই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।’
একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তরের সফলতা হিসেবে দ্য ইকোনমিস্ট ২০২৪ সালে বাংলাদেশকে ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে, লুটপাট হওয়া ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত আনা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া ও অর্থনীতি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়।
ইউনূস উল্লেখ করেন, দায়িত্ব নেওয়ার সময় পুলিশ উধাও, অর্থনীতি ধ্বংসস্তূপে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে আসছিল এবং হাজারো মানুষ নির্যাতনকেন্দ্রে বন্দি ছিল। ধাপে ধাপে তিনি গণতন্ত্র পুনর্গঠন শুরু করেন। সেনাবাহিনীও প্রতিবাদ দমনে গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
ইউনূস স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন শেষে তিনি রাষ্ট্রীয় পদ থেকে সরে যাবেন। তিনি কোনো নির্বাচিত বা পরবর্তী সরকারে কোন পদে থাকবেন না। এই মুহূর্তে তার সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ ইতোমধ্যে সহায়তা দিয়েছে। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক মতামত নিয়ে সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরশাসনে না পড়ে।
জেনারেশন জেড-এর অনুপ্রেরণার প্রশংসা করে ইউনূস লেখেন, বাংলাদেশের তরুণরা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে হতাশাকে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শুধু জেনারেশন জেড নয়, বরং এক্স, মিলেনিয়াল এবং আসন্ন জেনারেশন আলফাও একসঙ্গে কাজ করে ‘থ্রি জিরো ওয়ার্ল্ড’— শূন্য বেকারত্ব, শূন্য দারিদ্র্য ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ- বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে।
ড. ইউনূসের মতে, বাংলাদেশের মানুষ যদি আগামী মাস ও বছরে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে চলে, তবে দেশ নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে। আর এই যাত্রায় বাংলাদেশের বৈশ্বিক বন্ধুদের সহযোগিতা হবে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ- হয়তো শেষ সুযোগও।
টিএইচ