
দেশে চাকরির তুলনায় চাকরিপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি। আবার নিয়োগ কর্তারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে পারেন না। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি পাওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাই প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি যুব বেকার বা চাকরিপ্রত্যাশীদের দক্ষতা উন্নয়ন খুব জরুরি।
কক্সবাজারের লিংক রোডে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের হল রুমে আজ বুধবার (১৩ই আগস্ট ২০২৫) 'যুব ক্যারিয়ার ভাবনা' শীর্ষক সামাজিক সংলাপে বিশিষ্টজনরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও ব্র্যাক ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর দি ওমেন অ্যান্ড ইয়থ ইন কক্সবাজার (আইএসইসি) প্রকল্প যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইদুজ্জামান চৌধুরী।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন, কক্সবাজার জেলার তথ্য কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার, জেলার সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসান মাসুদ, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, কক্সবাজার জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এ এম খালেকুজ্জামান, কক্সবাজার সিটি কলেজের পর্যটন ও আতিথেয়তা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মইনুল হাসান পলাশ, ডাচ বাংলা ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার সিনিয়র সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ সাজ্জাদ সালাম, ব্র্যাকের আইএসইসি প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট লিড মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতাধীন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কোঅর্ডিনেটর মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কক্সবাজার ক্যারিয়ার হাবের কাউন্সেলর সানজিদা রশিদ। সংলাপে ‘ক্যারিয়ার ভাবনা’ বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন কক্সবাজার ক্যারিয়ার হাবের প্রশিক্ষক জীবন বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সুশীল সমাজ, নিয়োগকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংকার, সাংবাদিক ও চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ-তরুণীসহ মোট দেড় শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। আমরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এসব প্রশিক্ষণ বিষয়ে অনেকের ধারণা নেই। আপনারা প্রশিক্ষণ বিষয়ে জানার চেষ্টা করুন।"
সমাপনী বক্তব্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চাকরির বিকল্প হিসেবে নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, "এখন চাকরির বাজার অনেক প্রতিযোগিতামূলক। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে যুব বেকার বা চাকরিপ্রত্যাশীদের দক্ষতা উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।"
উন্মুক্ত সংলাপে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী 'ক্যারিয়ার ভাবনা' নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
আলোচনায় বেশ কয়েকটি সুপারিশ উঠে আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : তরুণদের বাজার চাহিদা ও বাস্তবতার নিরিখে ক্যারিয়ার নির্বাচন, অভিভাবকদের নিজেদের স্বপ্নকে সন্তানের ক্যারিয়ারের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা, চাকরির জন্য না ছুটে বরং উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করা, ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে তরুণদের বড় পেশার পাশাপাশি ছোটখাট পেশাকেও গুরুত্ব দেওয়া, ভাষাগত, যোগাযোগ ও নেটওয়ার্কিং দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ব্র্যাক-এসডিপির তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর ২.২ মিলিয়ন তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করে। এই প্রেক্ষাপটে যুবদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধিতে করণীয় এবং কর্মদক্ষতা উন্নয়নে ব্র্যাক-স্কিলস ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ব্র্যাক-এসডিপি) আওতায় ইতিমধ্যে চালু হয়েছে 'ক্যারিয়ার হাব' নামে বিশেষ সেবা। এই সেবার লক্ষ্য হচ্ছে চাকরিপ্রত্যাশীদের দক্ষতা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী নিয়োগকারীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করা। আর বিশেষ সেবাসমূহের মধ্যে রয়েছে : ক্যারিয়ার পরামর্শ, চাকরির প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ, জীবন বৃত্তান্ত (Curriculum Vitae বা সিভি) পর্যালোচনা এবং চাকরির জন্য সঠিক রেফারেন্স প্রদান।
প্রসঙ্গত : ব্র্যাকের আইএসইসি প্রকল্পের মাধ্যমে কক্সবাজার ক্যারিয়ার হাবের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। কক্সবাজারের যুব, প্রান্তিক নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা-এর আর্থিক সহায়তায় ব্র্যাক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ইউএনডিপি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
টিএইচ