ঢাকা,

০১ জুন ২০২৫


টাঙ্গাইলে চাহিদার তুলনায় ২৫ হাজার বেশি কুরবানির পশু

সাইফুল ইসলাম সবুজ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি 

প্রকাশিত হয়েছে: ২৩:০৬, ৩০ মে ২০২৫

টাঙ্গাইলে চাহিদার তুলনায় ২৫ হাজার বেশি কুরবানির পশু

টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় সরকারি হিসেবে চাহিদার তুলনায় ২৫ হাজার ১৬টি কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এবারের কোরবানিকে ঘিরে মব ভায়োলেন্সের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে কোরবানির হাটে পশুর দাম কম থাকার আশা করছে ক্রেতারা। এদিকে কোরবানির হাটকে কেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ।

জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় ২৬ হাজার ২০৩টি খামারে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৯৯০টি গবাদি পশু কোরবানির হাটে উঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে এক লাখ পাঁচ হাজার ৬৯টি গরু, এক লাখ ২২ হাজার ৩০৮টি ছাগল এবং ৯ হাজার ১১৯টি ভেড়া রয়েছে। এসব পশুর বিপরীতে জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৯৭৪টি। ফলে ২৫ হাজার ১৬টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

সূত্রমতে, গত বছর জেলার বিভিন্ন জায়গায় ২৫ হাজার ৮৯২টি ছোট-বড় খামারে দুই লাখ চার হাজার ৪০৬টি পশু কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। ওই বছর কোরবানির চাহিদা ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার পশু। জেলার চাহিদার তুলনায় ১৯ হাজার ৪০৬টি পশু উদ্বৃত্ত ছিল। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৩১১টি বেশি খামারে ৩২ হাজার ৫৮৪টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সরকারি হিসাবে জেলায় এ বছর ২৬ হাজার ৯৭৪টি কোরবানি বেশি হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলার পাড়া-মহল্লার কোরবানিদাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি হিসাব তো থাকে খাতা-কলমে। বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। সাধারণত যেসব পরিবার আর্থিকভাবে অনেকটা স্বচ্ছল তারাই প্রতিবছর কোরবানি দিয়ে থাকেন। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের একটি বড় অংশ সমাজে বিত্তশালী। বর্তমানে সব ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের আত্মগোপনের কারণে জেলায় এবার কোরবানি অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়া নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের সাধারণ সমর্থক ও চাকুরিজীবীরা ভাবছেন, কোরবানি দিলে যদি কেউ ভাবে অনেক টাকা-পয়সা আছে। তাহলে তারা মব ভায়োলেন্সের শিকার হতে পারেন। এ আশঙ্কায় তারাও কোরবানি দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন।

নাম প্রকাশ না করে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের সমর্থক ও ব্যবসায়ী জানান, তারা গত বছর এক থেকে চার লাখ টাকার মধ্যে গরু কোরবানি দিয়েছেন। এবার ব্যবসায় মন্দাভাব ও মব ভায়োলেন্সের আশঙ্কায় কোরবানি দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। তবে কেউ কেউ কয়েকজন একত্র হয়ে ‘ভাগে’(অংশিদারিত্বে) কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা পোষন করছেন।

একই শর্তে অন্তত চারজন চাকুরিজীবী জানান, এবার তারা কোরবানি দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। কারণ কোরবানি দিলে ‘অনেক টাকা আছে’ মনে করে যদি কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে মব ভায়োলেন্স করার চেষ্টা করে! তবে এরআগে প্রতিবছরই তারা কোরবানি দিয়েছেন।

এদিকে, খামারি ও গৃহস্থরা কোরবানির বাজারে ভালো দাম পাওয়ার আশায় শেষ সময়ে কোরবানিযোগ্য পশুর যতœ-পরিচর্যা বাড়িয়েছেন। অনেক খামারি ইতোমধ্যে গরু বিক্রি শুরু করেছেন। চাহিদার তুলনায় বেশি লালন-পালন করা পশু খামারি ও গৃহস্থরা জেলার বাইরে বিক্রি করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন।

কয়েকজন খামারি জানায়, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচারণা চালানোয় অনেকে তাদের নির্দিষ্ট পশু কিনতে আগ্রহ জানিয়ে মেসেজ করছেন। কেউ কেউ অগ্রীম বায়নাও দিচ্ছেন। তবে গো-খাদ্যের দাম বেশি থাকায় কোরবানির হাটে গবাদি পশুর দাম এবার কিছুটা বেশি হতে পারে। পশু-খাদ্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় লালন-পালন বেশ কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কয়েকজন খামারি জানায়, ভারতীয় গরু দেশের বাজারে প্রবেশ করতে না পারলে তারা হাটে ন্যায্যমূল্যে পাবেন। জেলায় পর্যাপ্ত গরু-ছাগল রয়েছে। বাইরে থেকে পশু আনতে হবে না। তারাই গরু-ছাগল-ভেড়া অন্য জেলায় পাঠাতে পারবেস। তবে খামারি ও গৃহস্থরা কোরবানিযোগ্য পশু ঠিকমতো বাজারজাত করতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা(অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. মো. শহীদুল আলম জানান, জেলায় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৯৯০ গবাদি পশু কোরবানির হাটে উঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। চাহিদার তুলনায় ২৫ হাজার ১৬টি বেশি গবাদিপশু রয়েছে। এ কারণে জেলায় কোরবানির পশুর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি জানান, বিভিন্ন উপজেলার মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এবার ছোট ছোট কোরবানিগুলোও হিসাবে ধরার ফলে চাহিদার সংখ্যা বেড়েছে। হাটে গবাদি পশু অসুস্থ্য হলে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারী টিম নিয়োজিত রাখা হবে।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আদিবুল ইসলাম জানান, কোরবানির হাটের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি গরুর হাটের ইজারাদারদের হাটের প্রবেশমুখ এবং গুরুত্বপূর্ণস্থানে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গরুর কোনো বেপারী যদি বড় অঙ্কের টাকার লেন-দেন করেন সেক্ষেত্রে চাইলে পুলিশ সাপোর্ট দিবে।

টিএইচ

News