
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন প্ল্যাটফরমটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। শুক্রবার (২৭ জুন) দিবাগত রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে এই ঘোষণা দেন তিনি। নিজের দীর্ঘ পোস্টে ফাতেমা জানান, গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে প্রতারিত হয়েছেন তিনি। সেই সাথে ছাত্রদের পড়ার টেবিলে ফেরার আহ্বানও জানান ফাতেমা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফরম তাদের সাথে ছলনা করেছে জানিয়ে নিজের দীর্ঘ পোস্টে ফাতেমা বলেন, ‘আমি অত্যন্ত অশান্তিতে আছি। অভ্যুত্থান যেমন স্বপ্ন দেখিয়েছে, গোষ্ঠীস্বার্থে এই প্ল্যাটফরম একইভাবে বহু মানুষের স্বপ্ন ও সময় নষ্ট করেছে। আমি অভ্যুত্থানের স্বপ্নকে রক্ষার জন্য এই প্ল্যাটফরম গিয়েছিলাম। প্ল্যাটফরমে যাওয়ার আগে আমাকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব।
কিন্তু প্ল্যাটফরমের মুখপাত্র হিসেবে যাওয়ার পরেই টের পাই সংস্কার, জুলাই, শহীদ, আহত এসব মুখের বুলিমাত্র। শুধু আমি না, অনেক ছাত্ররাই পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে প্ল্যাটফরমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। সবার সঙ্গে শুধু ছলনা হয়েছে।’
ছাত্রদের পড়ার টেবিলে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফাতেমা বলেন, ‘যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, আমার সঙ্গে নোংরামি করেছে এতগুলা মাস, অভ্যুত্থানকে বাজারদরে কেনাবেচা করেছে তাদের আমি কখনো ক্ষমা করব না।
আমি রুহের ভেতর থেকে বদ দোয়া দিচ্ছি এই মোনাফেকদের। রাজনৈতিকভাবে চাইলে অনেক সুবিধা আমি নিতে পারতাম। কিন্তু পারি নাই। আসে নাই ভেতর থেকে। অনেক বেশি মানুষ মারা গেছে আসলে।
এতগুলা সন্তান এতিম হইছে, মেয়েরা বিধবা হইছে, বাবা-মা সন্তানহারা হইছে। আমি পারি নাই এসবকে পলিটিক্যালি ক্যাশ করতে। আমি গত ৮-৯ মাসকে ঝেড়ে ফেলে সামনে আগাতে চাই। অনেক ভালো ছেলে-পেলেকে এই প্ল্যাটফরমে আমি দেখেছি, গুডউইল আছে যাদের। আমি পরামর্শ দেব আপনারা সবাই যাতে পড়ার টেবিলে মনোযোগ দেন, কাজে মনোযোগ দেন। আমিও ভেঙে পড়ছি না, গুছিয়ে আনছি সবকিছু। ফি আমানিল্লাহ।’
ঢাকার বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে গত বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে এক বছরের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির সভাপতি হয়েছেন রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশিদ); সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন মো. ইনামুল হাসান (হাসান ইমাম)।
উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী এই সংগঠনটির শীর্ষ নেতারাই পরে রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি গঠন করেন। তবে দল গঠনের পরও জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যেসব অসমাপ্ত কাজ থেকে গিয়েছিল, তা সম্পন্ন করতেই উমামা ফাতেমা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারেই কাজ করা শুরু করেছিলেন বলে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন। তবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক চাপ, ব্যক্তিগত আক্রমণ ও সংগঠনের ভেতরে সুবিধাবাদী চক্রের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। অবশেষে সংগঠনটি থেকে নিজেসে সরিয়ে নিয়েছেন উমামা ফামো।
টিএইচ