
ফাইল ছবি
প্রহসনমূলক নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৩ জুন) বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতের কাঠগড়ায় তোলার পর তার মাথা থেকে হেলমেট ও বুকে থাকা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট খুলে ফেলা হয়। হাতকড়াও খোলা হয় তার। এ সময় উপস্থিত আইনজীবীরা তাকে সালাম জানান এবং তিনি সবাইকে হাসিমুখে হাত নেড়ে ধন্যবাদ জানান।
বিচারকের প্রশ্ন, নুরুল হুদার জবাব
রিমান্ড শুনানির সময় বিচারক মোস্তাফিজুর রহমান নুরুল হুদার কাছে প্রশ্ন করেন,
বিচারক: “আপনি কি মনে করেন, আপনি আপনার শপথ ভঙ্গ করেছেন?”
নুরুল হুদা: “আমি মনে করি না।”
এরপর বিচারক ফের প্রশ্ন করেন,
বিচারক: ‘আপনি কি মনে করেন, আপনি মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে পারেননি?’
নুরুল হুদা: ‘ঢাকায় বসে নির্বাচন কমিশনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফেয়ার নির্বাচন রক্ষার সুযোগ নেই।’
বিচারক বলেন, ‘তবুও আপনি তো ফেয়ার নির্বাচনের শপথ নিয়েছিলেন। যারা অবৈধ নির্বাচনে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?’
নুরুল হুদা: ‘এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়, এটা উচ্চ আদালতের।’
বিচারক আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার অধীনস্থ কেউ জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন?’
নুরুল হুদা: ‘প্রসিকিউশন বলছে, ইসি টাকা দিয়ে অবৈধ নির্বাচন আয়োজন করেছে। এর কোনো সুযোগ নেই।’
২২ জুন (রবিবার) শেরে বাংলা নগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় নুরুল হুদাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
সেদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। উত্তরা বিভাগের ডিসি মইদুল ইসলাম জানান, “কিছু লোক তার বাসা ঘেরাও করেছিল, তাই তার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ তাকে কাস্টডিতে নেয়।”
এ মামলায় অভিযুক্ত অন্য দুই সিইসি হলেন—২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়কার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়কার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কে এম নুরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচন, যেটিকে বিএনপি “প্রহসন” বলে অভিহিত করেছে।
চার দিনের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় নুরুল হুদার বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত চলবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইউ