
রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা চালিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এই সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়াসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত ৯টার দিকে রংপুর নগরীর সেনপাড়া স্কাইভিউ বাসভবনে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুরে আসেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি সেনপাড়ায় স্কাইভিউতে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন। জিএম কাদেরের রংপুরে অবস্থান ঘিরে হঠাৎ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভের ডাক দেন।
এরপর সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রংপুর প্রেসক্লাব এলাকায় জড়ো হন। সেখান থেকে তারা জি এম কাদেরকে গ্রেপ্তার এবং আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিএনপির কার্যালয়-সংলগ্ন গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে এসে অবস্থান নেন। সেখান থেকে সেনপাড়ার স্কাইভিউয়ের দিকে অগ্রসর হন। এরপর সেখানে হামলার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তারা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। ঘটনার পর সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ঘটনাটি জানাজানি হলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা গ্রান্ড হোটেল মোড়ে এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সেনপাড়ায় অবস্থান নেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর সেখানে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে। বর্তমানে (রাত পৌনে ১০টার দিকে) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা টাউনহলের দিকে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সেনপাড়া ও সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে ঘটনাস্থলে এসে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, আমরা পার্টি অফিসে ছিলাম। হঠাৎ জানতে পারলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা আমাদের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ করছেন। পরে তারা এনসিপিসহ অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা করেছেন। আমরা সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চাই। কিন্তু রংপুরে আজকে যারা এই আগুন জ্বালালো, এখন তা নেভানো যাবে না।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নেই। যদি থাকতো তাহলে এভাবে কারও বাসায় হামলা হতো না। এখন ইচ্ছে হলেই ২০-৫০ জন একসঙ্গে হয়ে মব ভায়োলেন্স করতেছে। আমরা সাংগঠনিকভাবে আজকের ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেবো।’ ঘটনার সময় জিএম কাদের স্কাইভিউতে ছিলেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘সেনপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিলে জাতীয় পার্টি ছাত্র-জনতার মিছিলের ওপর হামলা চালিয়েছে। রংপুরের জনগণ এবং সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাচ্ছি, টাউনহলে আসুন।'
এদিকে এই ঘটনার পর শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
টিএইচ