
ছবি সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশের রাজস্ব কর্মকর্তারা পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। ২৬ মে (সোমবার) থেকে শুরু হতে যাওয়া এই কর্মবিরতির ফলে বন্ধ থাকবে দেশের সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, ওষুধ এবং জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তারা।
‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা বলছে, গত ১২ মে সরকার ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যে তারা অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করলেও এবার প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।
রবিবার (২৫ মে) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরিষদ সরকারের উদ্দেশ্যে তিনটি প্রশ্ন তোলে:
১. এনবিআর বিলুপ্তির বিষয়ে কোনো আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা পরামর্শ দিয়েছে কি না?
২. অধ্যাদেশ প্রণয়নের সময় এসব সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না?
৩. এনবিআর বিলুপ্তি কোনো দাতা সংস্থার ঋণশর্ত ছিল কি না?
পরিষদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজস্ব প্রশাসন স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই সরকার যেভাবে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করেছে, তা বাস্তবতাবিবর্জিত এবং অনিরীক্ষিত মডেল। এতে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থার দক্ষতা কমবে এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া জাতীয় উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে তারা আশঙ্কা করছে।
সংগঠনটি আরো বলেছে, “আমরা এনবিআরের আমূল সংস্কার চাই, কিন্তু সেটি হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মডেল ও সর্বোত্তম চর্চার ভিত্তিতে।”
পরিষদের চার দফা দাবি হলো-
১. জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা
২. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ
৩. রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ প্রকাশ
৪. সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা
এদিকে আন্দোলনের মধ্যেই শনিবার রাজধানীর রাজস্ব ভবনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা ভবনের ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধা দিলে তা পরে ভবনের সামনেই আয়োজন করা হয়।
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করছেন, তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা উপেক্ষা করে নতুন দুটি বিভাগ গঠনের মাধ্যমে রাজস্ব প্রশাসনে একটি অনভিজ্ঞ গোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করার চেষ্টা চলছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
পরিস্থিতির দিকে দেশের ব্যবসায়ী মহল, আমদানি-রপ্তানি খাত এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও নজর রাখছে। ২৬ মে (সোমবার) থেকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে এর বিরূপ প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইউ