
ছবি: বিজনেস আই
ঢাকার চারটি প্রধান নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে একটি বৃহৎ প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রক্রিয়াগত দেরি থাকলেও শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন ও সেরা চর্চার প্রসার’ শীর্ষক জাতীয় জ্ঞান বিনিময় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশে পাঁচ ফুট পর্যন্ত প্লাস্টিক জমে রয়েছে। এটিকে খননের সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিন্তু এত গভীর স্তর থেকে প্লাস্টিক তুলতে এখনো আমাদের উপযুক্ত যন্ত্র নেই। বিআইডব্লিউটিএ একটি যন্ত্র আনার চেষ্টা করছে, যা হয়তো নভেম্বরে দেশে আসবে।’
এ সময় উপদেষ্টা আরো জানান, খাল ও নদীর অস্তিত্ব কোথাও কোথাও প্রায় মুছে গেছে। কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফাইল অনুমোদনের আগে খালটি নিজ চোখে দেখতে গিয়েছিলাম। বাস্তবে এটি আর খাল নয়, একটি প্লাস্টিকে ভরা নর্দমা মাত্র।’
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পলিথিন এবং সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের পরিবর্তে আমাদের অভ্যাস বদলাতে হবে। স্ট্র-এর মতো পণ্য বন্ধে জুলাই থেকেই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পাটের ব্যাগকে সুলভমূল্যে বাজারে আনতে কাজ চলছে।’
তিনি জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার কমে এসেছে, যা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। ‘সুপারশপগুলোতে পলিথিন বন্ধ করে দিতে পেরেছি। এটাই প্রমাণ করে, আমরা চাইলে পারি।’
কর্মশালায় জানানো হয়, প্লিজ প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে ৩ লাখ ৮৪ হাজার কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্ণব চক্রবর্তী জানান, কল্যাণপুর খালে ভাসমান ব্যারিয়ারের মাধ্যমে ৬৫ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক অপসারণ করা হয়েছে, আইওটি প্রযুক্তি দিয়ে ট্র্যাক করা হচ্ছে নদী দূষণ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএমএস বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা উপকূলীয় এলাকায় ‘সার্কুলার ইকোনমি’ চালু করেছি। পরিত্যক্ত মাছ ধরার জাল থেকে উৎপাদন করছি পরিবেশবান্ধব পণ্য।’’
রেড অরেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অর্ণব চক্রবতী বলেন, ‘আমাদের সরকার পরিবেশবান্ধব। পরিষ্কার নদী, উপকূল ও কমিউনিটি যেন স্বপ্ন নয় বরং জাতীয় মানদণ্ড হয়, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। রেড অরেঞ্জ লিমিটেড ঢাকার কল্যাণপুর খালে ভাসমান ব্যারিয়ার স্থাপন করে ইতিমধ্যে ৬৫ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য সংগ্রহ করেছে। আইওটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লাস্টিক দূষণ ট্র্যাক করছে।’
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, ‘এই প্রকল্প শুধু পরিবেশগত নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতীক। বর্জ্য সংগ্রাহকদের স্বীকৃতি, নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং তরুণদের উদ্ভাবনী চর্চা এটিকে মানবিক রূপ দিয়েছে।’
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম বলেন, ‘প্লাস্টিক সংকটে উদ্ভাবন এবং অংশীদারিত্ব অত্যন্ত জরুরি। আমাদের এই কাজের পরিধি বাড়াতে হবে।’ আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি ড. মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘সুন্দরবনে চালু করা হয়েছে দেশের প্রথম প্লাস্টিক অডিট, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বর্জ্য খাত ডিজিটাল হচ্ছে।’
বাংলাদেশ এখন প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় ‘কথা নয়, কাজ’-এর পথে। নদী পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বাস্তবভিত্তিক উদ্ভাবনের ছোঁয়া রাখছে ‘প্লিজ’ প্রকল্প। সরকারের সদিচ্ছা, নাগরিক অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সহায়তায় গড়ে উঠছে একটি স্বপ্ন-পরিষ্কার নদী, পরিচ্ছন্ন উপকূল এবং একটি টেকসই, প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ।
ইউ