
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি সমস্যা নিরসনের লক্ষে ভূমি কমিশন সক্রিয়করণ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের আয়োজনে আজ সোমবার ১৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী। আন্দোলনের সদস্য দীপায়ন খীসার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অংশ নেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা শামসুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদ এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুল ফিরোজ রশিদ, গণফোরাম এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ৷
মতবিনিময় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন৷ তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে ভূমি। পাহাড়ে আবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ এমনিতেই অত্যন্ত কম। আর পাহাড়ে ১৯৭৯ সাল থেকে দেশের সমতল জেলাগুলো থেকে পাহাড়ে কমপক্ষে চার লক্ষাধিক বহিরাগত লোক নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকে জুম্মদের ভোগ দখলীয় ও রেকর্ডীয় জমির উপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। নানা ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার মাধ্যমে জুম্মদেরকে উচ্ছেদ করে জমিগুলো বেদখল করে নেয়া হয় প্রচলিত আইন ও প্রথা লঙ্ঘন করে৷ তাই পাহাড়ের ভূমি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি জলন্ত অগ্নিকান্ড।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবর্তে সরকার জুম্ম গ্রামবাসীদের একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনাসমূহ সংঘটিত করে এসেছে। তাই পার্বত্য ভূমি সমস্যা সমাধানে ৪ টি আশু করণীয় রয়েছে। সেগুলো হল: ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রনয়ণ, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ, পর্যাপ্ত জনবল, তহবিল ও পরিসম্পদ বরাদ্দকরণ এবং এই কমিশনের আইন সম্পর্কে জনগণকে যথাযথ ধারণা প্রদান করা, পাহাড়ের প্রচলিত রীতি, নীতি, পদ্ধতি সম্পর্কে প্রথাগত প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি সংক্ষুব্দ ব্যক্তিদের সচেতন করা।
শামসুল হুদা বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের মূল স্লোগান ছিল- বৈষম্য বিলোপ। শিক্ষার্থীরা অনেক গ্রাফিতি অংকন করেছেন। সেখানে সকল ধরণের বৈষম্য নিরসনের কথা বলা আছে। ভূমি অধিকার, শিক্ষা, লিংগ বৈষম্যসহ সকল ধরণের বৈষম্য নিরসনের শপথ নিয়েই অন্তরবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু এই সরকার তো পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে কোথাও হাত দিলেন না। আমরা দেখেছি পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন নিয়ে বার বার নাটক করা হত। সরকার যখন এই কমিশন কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছিল তখন কিছু লোক সামনে থেকে কার্যক্রম বন্ধের ষড়যন্ত্র করত। কিন্তু এর পেছনেও সরকারেরই মানুষ রয়েছে। সরকারের ভেতর আরেকটি সরকার। এই চুক্তি তো কোনো ব্যক্তির সাথে ব্যাক্তির নয়৷ এটি রাষ্ট্রের সাথে পাহাড়ের আদিবাসীদের চুক্তি। কাজেই এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতেই হবে। আমরা সারা দেশে গণতন্ত্রের লড়াই করবো কিন্তু পাহাড় তার বাইরে থাকবে সেটা হবে না৷ কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বজলুল রশীদ ফিরোজ বলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন করবে কী না সেটা নির্ভর করবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ও সমতলের তাদের বন্ধুরা যারা আছে তাদের সম্মিলিত লড়াই কতটুকু শক্তিশালী তার উপর৷ পাহাড়ে যে সেটলার বাঙালীদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদেরকে অসৎ উদ্দেশ্যেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকে পাহাড়ের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের কোনো দিক নির্দেশনা যদিও এই পার্বত্য চুক্তিতে নেই। আর ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য যে ভূমি কমিশন করা হয়েছে সেই কমিশন তো বৈঠকই করতে পারে নাই। আর এবারের অন্তরবর্তীকালীন সরকারও তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহন করতে পারেনি। সরকার নানা কমিশন করেছে, সেগুলোতে আদিবাসীদের কার্যকর কোনো প্রতিনিধি নেই। বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কোনো প্রতিনিধিই রাখা হয়নি। আর ঐক্যমত্য কমিশনকে দেখা গেছে যারা এই চুক্তির বিরোধিতা করেছেন তাদেরকে নিয়ে কিছু সংলাপ আয়োজনের উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। কিন্তু যারা চুক্তি করেছেন এবং বাস্তবায়নের আন্দোলনে আছেন তাঁদের সাথে কোনো সংলাপ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি ঐক্যমত্য কমিশন৷ কাজেই আমাদের লড়াই জারি রাখতে হবে।
আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, পাহাড়ে ভূমি সমস্যা সমাধানে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ যারা যারা এই পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন তাঁদের নিয়ে আলাদা এজেন্ডা করেই সংলাপ হওয়া জরুরি। সেখানে এই সরকারের ভূমি উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাই তারা যেন এই উদ্যোগটি গ্রহণ করে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, পাহাড়ের সমস্যার অন্যতম বিষয় হল ভূমি সমস্যা। এর সমাধান ছাড়া বাকী বিষয়গুলোর অগ্রগতি অসম্ভব। সাধারণভাবে মনে করেছিলাম চুক্তি হলে, আইন হলে, বিধিমালা হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। কারণ, তাতে রাজনৈতিক সমঝোতা জোড়ালো হয়নি। যদি রাজনৈতিক সমঝোতাও হয় তবে চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামরিক ও বেসামরিক আমলারা যে বড় ফ্যাক্টর, তাদেরকে আমরা একমত করতে পারিনি। কারণ, তাদেরকে একমত করা ছাড়া এই চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব না। আমরা দেখলাম, মৌলিক অধিকার নিয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের যে আলোচনা সেখানে লক্ষ্য করেছি একটা মৌলবাদী গোষ্ঠী সেখানে "আদিবাসী" শব্দ নিয়ে আপত্তি তোলায় কমিশন এই আলোচনা করা থেকে বিরত থাকলো। মনে রাখতে হবে এই কমিশনতো আসলে মৌলবাদী গোষ্ঠীর তাঁবেদারিই করছে।
তিনি আরো বলেন, ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় পাহাড়ে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটছে। আমরা দেখছি সেখানে অন্য এক শক্তি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে। কাজেই সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে পাহাড়ের আদিবাসীদের সসমস্যা সমাধানের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে আমাদের লড়াই চলমান রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
সাইফুল হক বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমার একটি গ্রাফিতি চোখে পড়েছে, সেটি হল- পার্বত্য চট্টগ্রামে ছত্রিশে জুলাই কবে হবে। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম ভূমি সমস্যা সমাধানে সরকার বিগত এক বছরে কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেনি। এমনকি যদি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয় তবে এর মধ্যে এ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ গ্রহন করা হবে বলে কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না৷ ভারতের কাশ্মীর ও কিছু ভূখন্ডের মত পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিকায়ন চলছে কেবল। গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, স্বৈরাচারি সরকার বিদায় নিয়েছে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের বেপারে নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা উল্টো দেখেছি পাহাড়ে বিগত এক বছরে সামরিকায়ন বেড়েছে, নারীদের উপর সহিংসতা বেড়েছে, নাগরিক অধিকার ভুলন্ঠিত হচ্ছে। সেখানে যা হচ্ছে তা মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে সেগুলো আসছে না৷ অন্যদিকে চলছে "ভাগ কর, শাসন কর" নীতি। এতে পাহাড়ীদের মধ্যে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে প্রাণঘাতী রাজনীতি চলমান রয়েছে। সেখানে যে সেটলার বাঙালিদের পুনর্বসন করা হয়েছে তারা এখন মোট জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই দশকে তাদের সংখ্যা আরো বাড়বে এবং পাহাড়ীরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। কাজেই রাজনৈতিকভাবে এ সমস্যার সমাধান ব্যাতীত কোনো বিকল্প আমি দেখছি না।
নাজমুল হক প্রধান বলেন, বাংলাদেশের সরকারগুলি গন্ডারের মত। পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও সরকারগুলো যোক্তিক কোনো উদ্যোগই গ্রহন করা হয়নি। তাই সমস্যা আরো প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড়ের মানুষজন যে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ সেটা কোনো সরকারই অনুভব করেনি। মনে করা হয় এই চাকমা, মারমা, ত্রিপুরারা অন্য দেশের, অন্য কেউ। যার কারণেই তো সেখানে সেটলার বাঙালী ঢুকিয়ে দেওয়ার চিন্তা করা হয়েছিল। আর সরকারের উচিত কোন সরকারের আমলে পাহাড়ের কত ভূমি দখল করা হয়েছিল, অবৈধভাবে লীজ দেয়া হয়েছিল। সেসব প্রকাশ করার জোর দাবি জানাই। কত সেটলার, কোন সংখ্যায় সেখানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে সেটাও প্রকাশ করা হোক। আর পাহাড়ের ভূমি সমস্যার সমাধানে ভূমি কমিশন কার্যকর করে আদিবাসীদের ভূমি সমস্যার সমাধান করা হোক।
এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমি একটা বিষয় বুজি না পাহাড়ের রাজারা কেন সব সরকারের সাথে আপোষ করেছেন ? আর কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণী তৈরী করা হয়েছে তারাও আপোসমুক। যে বিচারপতিরা পার্বত্য ভূমি কমিশনের দায়িত্বে এসেছেন তারা কেউই কাজের ছিলেন না। অনেক শারিরীকভাবে অসুস্থ, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা পাহাড়ে গিয়ে অফিসও করতে পারে না। ঢাকায় একটা অফিস রাখে, কেবলমাত্র মাসিক বেতনগুলো তোলার জন্য। এদের দিয়ে কোনো কাজ হবে না। আমরা দেখেছি পাহাড়ে যে সেটলার বাঙালিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদেরকে ভূমিহীন বলা হয়৷ আমিতো অনেককেই দেখি যারা চট্টগ্রাম, বরিশাল থেকে পাহাড়ে পুনর্বাসিত হয়েছে তাদের অনেকেই বড় বড় জমির মালিক। এখানেও জমির মালিক এবং পাহাড়ে গিয়েও একরের পর একর জমি কিনেছেন। তারা কীভাবে ভূমিহীন হয়। এই সরকারও তো কোনো দায়িত্ব নিল না। কাজেই আমাদের সম্মিলিত লড়াই জারি রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সুপ্রীম কোর্টেও আমরা কিছু বিষয় দেখি সেখানে সব রায় পাহাড়িদের বিরুদ্ধেই যায়। গত কিছুদিন আগে দেখলাম সেখানকার জেলা পরিষদের নিয়োগে আদিবাসীদের অগ্রাধিকার প্রদানের বিরুদ্ধে রিট করা হয়েছে। এভাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে পাহাড়ীদের অধিকার ভুলুন্ঠিত করা হচ্ছে। এজন্য রাজপথের আন্দোলন জারি রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খায়রুল চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা বিচ্ছিন্ন কোনো সমস্যা নয়৷ এটা একটি রাজনৈতিক সমস্যার। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট যদি এই সরকার আমলে না নেয় তবে আগামীর যে সংকট আসবে সেটা কেউই ঠেকাতে পারবেন না। কাজেই এ সংকট সমাধানে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
পাহাড়ে বিগত সরকারগুলোর সময়ে কত জমি অবৈধভাবে দখল করা হলো, কত সেটলার ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তার তালিকা প্রকাশ করা হোক: মতবিনিময় সভায় বক্তারা
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি সমস্যা নিরসনের লক্ষে ভূমি কমিশন সক্রিয়করণ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের আয়োজনে আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) , ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী। আন্দোলনের সদস্য দীপায়ন খীসার সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অংশ নেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শামসুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদ এর সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুল ফিরোজ রশিদ, গণফোরাম এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ৷
মতবিনিময় সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন৷ তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে ভূমি। পাহাড়ে আবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ এমনিতেই অত্যন্ত কম। আর পাহাড়ে ১৯৭৯ সাল থেকে দেশের সমতল জেলাগুলো থেকে পাহাড়ে কমপক্ষে চার লক্ষাধিক বহিরাগত লোক নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকে জুম্মদের ভোগ দখলীয় ও রেকর্ডীয় জমির উপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। নানা ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতার মাধ্যমে জুম্মদেরকে উচ্ছেদ করে জমিগুলো বেদখল করে নেয়া হয় প্রচলিত আইন ও প্রথা লঙ্ঘন করে৷ তাই পাহাড়ের ভূমি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি জলন্ত অগ্নিকান্ড।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবর্তে সরকার জুম্ম গ্রামবাসীদের একের পর এক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনাসমূহ সংঘটিত করে এসেছে। তাই পার্বত্য ভূমি সমস্যা সমাধানে ৪ টি আশু করণীয় রয়েছে। সেগুলো হল: ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়ণ, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ, পর্যাপ্ত জনবল, তহবিল ও পরিসম্পদ বরাদ্দকরণ এবং এই কমিশনের আইন সম্পর্কে জনগণকে যথাযথ ধারণা প্রদান করা, পাহাড়ের প্রচলিত রীতি, নীতি, পদ্ধতি সম্পর্কে প্রথাগত প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি সংক্ষুব্দ ব্যক্তিদের সচেতন করা।
শামসুল হুদা বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থানের মূল স্লোগান ছিল- বৈষম্য বিলোপ। শিক্ষার্থীরা অনেক গ্রাফিতি অংকন করেছেন। সেখানে সকল ধরণের বৈষম্য নিরসনের কথা বলা আছে। ভূমি অধিকার, শিক্ষা, লিংগ বৈষম্যসহ সকল ধরণের বৈষম্য নিরসনের শপথ নিয়েই অন্তরবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু এই সরকার তো পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে কোথাও হাত দিলেন না। আমরা দেখেছি পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন নিয়ে বার বার নাটক করা হত। সরকার যখন এই কমিশন কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছিল তখন কিছু লোক সামনে থেকে কার্যক্রম বন্ধের ষড়যন্ত্র করত। কিন্তু এর পেছনেও সরকারেরই মানুষ রয়েছে। সরকারের ভেতর আরেকটি সরকার। এই চুক্তি তো কোনো ব্যক্তির সাথে ব্যাক্তির নয়৷ এটি রাষ্ট্রের সাথে পাহাড়ের আদিবাসীদের চুক্তি। কাজেই এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতেই হবে। আমরা সারা দেশে গণতন্ত্রের লড়াই করবো কিন্তু পাহাড় তার বাইরে থাকবে সেটা হবে না৷ কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বজলুল রশীদ ফিরোজ বলেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন করবে কী না সেটা নির্ভর করবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ও সমতলের তাদের বন্ধুরা যারা আছে তাদের সম্মিলিত লড়াই কতটুকু শক্তিশালী তার উপর৷ পাহাড়ে যে সেটলার বাঙালীদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদেরকে অসৎ উদ্দেশ্যেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদেরকে পাহাড়ের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের কোনো দিক নির্দেশনা যদিও এই পার্বত্য চুক্তিতে নেই। আর ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য যে ভূমি কমিশন করা হয়েছে সেই কমিশন তো বৈঠকই করতে পারে নাই। আর নেই।
টিএইচ