ঢাকা,

৩০ জুলাই ২০২৫


বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে শিল্পের মাধ্যমে সম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে

তারেক হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত হয়েছে: ২৩:১২, ২৯ জুলাই ২০২৫

বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে শিল্পের মাধ্যমে সম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে

বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে শিল্পের মাধ্যমে সম্পদে রূপান্তরিত করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। 

তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান এটি করছে। এছাড়া তিনি 'ওয়েস্ট পার্কের' মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে এই কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা ও সংঘবদ্ধভাবে কাজের প্রতি জোর দেন। বিচ্ছিন্নভাবে কাজে পরিবেশগত হুমকি তৈরি  না করে, পদ্ধতিগতভাবে কাজ করে পরিবেশগত ঝুঁকি কমানোর পরামর্শ দেন। ক্যাম্পেইনের জন্য বাজেট বাড়ানো এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। 

আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই ) বর্জ্য অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের বাস্তবচিত্র অনুধাবন এবং সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নির্ধারণে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির  (বেলা) আয়োজনে “পরিবেশগত অধিকার সুরক্ষায় সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক এক গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ এ মন্তব্য করেন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত মিলনায়তনে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয় ।

'ভয়েস ফর এ ক্লিনার ঢাকা : পাবলিক হেয়ারিং অন ওয়েস্ট এন্ড রাইটস ' শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম। এছাড়া বক্তব্য দেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ড. জসিম উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের  সহকারী পরিচালক মারুফ মায়মিন, রাজউকের ডেপুটি টাউন ট্রেইনার আবু কাওসার,  ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এস. এম. শফিকুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি মাহবুবুর আলম,
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোহাম্মদ আলী হোসেন, কেরানীগঞ্জের সমাজকর্মী রাকিবুল হাসান,  ওয়েস্ট কনসার্নের সিনিয়র রিসার্চ অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান,  প্রিজম বাংলাদেশ এর পরিচালক ক্যাপ্টেন রাকিব উদ্দিন ভুঁইয়া,গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ সুমনা শারমিন প্রমুখ।

গণশুনানিতে অংশ নেন এসডোর সভাপতি শাহরিয়ার হোসেন, ব্রেকিং দা সাইলেন্স এর ড. তারিকুজ্জামান, বাপার আমিরুল ইসলাম,  কড়াইলের হালিমা প্রমুখ। এছাড়াও ভুক্তভোগী নাগরিক,  স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিবৃন্দ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পরিবেশবিদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।  

গণশুনানিতে সবার বক্তব্য শুনে  মোহাম্মদ এজাজ দুটি প্রস্তাবনা করেন। একটি -নীতিগত বা পলিসিভিত্তিক দিকনির্দেশনা এবং আরেকটি হচ্ছে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ বা কোর্স অব অ্যাকশন।

তিনি বলেন, “আমরা যে বাস্তবতা দেখছি, সেটিই হলো আমাদের প্রেক্ষাপট। প্রশ্ন হচ্ছে, কোথা থেকে শুরু করব? একটি হচ্ছে নীতিগতভাবে কী কী করা যায়, কী হবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা—তা নির্ধারণ জরুরি। সিটি লেভেলে কী করা হবে তাও সুস্পষ্ট হওয়া দরকার।“

তিনি আর বলেন, বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন  নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। বাস্তবভিত্তিক সমাধান হিসেবে প্রাথমিকভাবে পৃথকীকরণ  ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু এসটিএস  (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন ) মানুষ বাসার পাশে চায় না। অন্যদিকে, ল্যান্ডফিল  দেড়শত বছরের একটি পুরোনো পদ্ধতি। তাও আমরা ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছি না। প্রশ্ন হচ্ছে—এই দায়িত্ব কে নেবে? সরকার না বেসরকারি খাত? 

এছাড়া, সিটি কর্পোরেশনের অধীনে একটি ‘ডেডিকেটেড পুলিশ বাহিনী’ যারা জরিমানা আরোপ ও নাগরিকদের নিয়ম মানাতে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি জানান। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে তাসলিমা ইসলাম বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুধু একটি পরিবেশগত অধিকার নয়, এটি একটি মানবাধিকার। ঢাকা ইতোমধ্যেই বিশ্বের তৃতীয় অযোগ্য বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে এখনই সঠিক সময় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের।”
তিনি আরও বলেন, “জনসংখ্যার চাপ, অপরিকল্পিত নগরায়ন, অপর্যাপ্ত ও অদক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সীমিত পুনর্ব্যবহারযোগ্য পরিকাঠামো, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং নাগরিক দায়িত্ববোধের অভাব এসব মিলে সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠেছে।” 

তিনি আরো বলেন,  মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে প্রতিদিন ৪ হাজার টন বর্জ্য থেকে ৪ টন  মিথেন গ্যাস নির্গত  হচ্ছে। এটি একটি গুরুতর পরিবেশগত হুমকি।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় লিগ্যাল ফ্রেমওয়াক নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ যা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অপর্যাপ্ত। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি ২০২৩- শিল্প বর্জ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং বর্জ্য সংগ্রহ এবং পরিবহনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব হলেও বাস্তবায়নের স্পষ্ট রূপরেখা নেই, তবে অনির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং একটি স্থায়ী কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১-এ স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় বাস্তবায়নে চরম ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন,  “ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরা প্রতিদিন কাজ করি, কিন্তু বাসাবাড়ি, দোকান, এমনকি রাস্তায়ও মানুষ ময়লা ফেলে যাচ্ছে। বলেও কাজ হয় না। এমনভাবে প্রচার করতে হবে যেন কেউ রাস্তায় ময়লা ফেলতে না পারে। জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় মাদক সেবনকারীরা প্রায়ই ম্যানহোল ও ড্রেনের ঢাকনা চুরি করায়  এবং ওয়াসার পাইপ বসানোর জন্য ড্রেন ভেঙে যাওয়ায় ময়লা সরাসরি নালায় গিয়ে পড়ে। যেখানে প্রিজম কাজ করতে পারছে না, সেখানে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

বক্তারা আরো বলেন,  রাজধানী ঢাকা ইতোমধ্যে বিশ্বের ৩য় অবসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্সে স্থান পেয়েছে। বর্জ্যরে চরম অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিনই জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। উৎপাদিত বর্জ্যের বড় একটি অংশ খাল, নদী ও জলাশয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
উল্লেখ্য, পরিবেশগত অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বেলা বিগত দুই যুগের বেশি সময় ধরে জনস্বার্থে আইনগত পদক্ষেপ, সচেতনতা বৃদ্ধি, গবেষণা এবং পরামর্শ প্রদানসহ নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

টিএইচ

News