
নেত্রকোণা জেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো মাসের অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে।
জেলার কয়েকটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, এগুলো থেকে সময়মত স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারছেন না সেবাগ্রহীতারা। দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণের কাছে এসব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনসাধারণ।
এসব কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা ডিউটি টাইমে দায়িত্বরতের না পেয়ে ঘুরে যান বেশিরভাগ সময়। কারন হিসেবে তারা জানান, তিনজনের ডিউটি থাকলে একজন আসেন। যিনি আসেন তিনি আবার ঘন্টাখানেক থেকে চলে যান। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) আটপাড়া উপজেলার কামরুন নাহার জেবু ১০ শয্যাবিশিষ্ঠ মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে সরেজমিন অনুসন্ধানে বেলা ১২ টা নাগাদ গিয়ে দেখা যায়, আটপাড়া উপজেলার মেডিকেল অফিসার পল্লব সাহা ও আরো ৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সেখানে উপস্থিত। মো: আব্দুল্লাহ আল নোমান, ফার্মাসিস্ট, দুওজ উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মো: শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ বিশিউড়া উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (পরিবার পরিকল্পনা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা, ১ জন আয়া, একজন মিডওয়াইফারি, একজন গার্ড সেখানে ডেপুটেশনে কর্মরত। কিন্তু, সেখানে কোন রোগী নেই আর আসেনও না।
কিন্তু সেখানে দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের জন্য রয়েছে উন্নতমানের থাকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়ার উন্নত ব্যবস্থা। কিন্তু যেসব উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা ক্লিনিকে তারা কর্মরত সেগুলোর কোনটি থাকে তালাবদ্ধ, কোনটিতে কাঙ্ক্ষিত সেবা কার্যক্রম নেই। পাশাপাশি আটপাড়া উপজেলার সুখারী ইউনিয়নের নাজিরগঞ্জ ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়েও দেখা যায়, সেটি তালাবদ্ধ। যারফলে এলাকার মানুষজন কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না। অথচ সেই উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেখানকার ফার্মাসিস্ট মাসুদ রানা থাকেন আবাসিকভাবে কিন্তু তিনি আটপাড়া হাসপাতালে ডেপুটেশনে কর্মরত থাকায় ডিউটি করেন না সেই কেন্দ্রে। সোমবার (২৮ জুলাই) বেলা ১টা নাগাদ মাসুদ রানাকে স্থানীয় বাজারের একটি ব্যক্তিমালিকাধীন ফার্মেসিতে আড্ডা দিতে দেখা যায়। তার কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ রানা জানায়, এই উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঔষধ নাই বলে কেউ আসে না। তাই তালাবদ্ধ থাকে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রায়দুম রুহী কমিউনিটি ক্লিনিকে বেলা ১ টা নাগাদ গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দায়িত্বরত সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রভাইডার) খন্দকার শামীমা আক্তার,
স্বাস্থ্য সহকারী গীতা সাহা, এফডব্লিউএ (ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার এসিস্ট্যান্ট) হালিমা আক্তার কেউ উপস্থিত নেই। ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, শামীমা আক্তার ও গীতা সাহা মাঝেমধ্যে ক্লিনিকে রোগীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তাই তারা মাঝেমধ্যে এক দুই ঘন্টার জন্য খুললেও রোগীরা যায় না সেখানে।
এবিষয়ে নেত্রকোণা জেলার সিভিল সার্জন ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানানো হলে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, কেউ ডিউটি টাইমে না থাকলে বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ নিব।
প্রসঙ্গত, জেলার উপ স্বাস্থ কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত দায়িত্বরতরা না থাকায়, আবার যারা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সপরিবারে থাকেন কিন্তু সেই উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম বন্ধ যেগুলো থেকে জনসাধারণ নূনতম স্বাস্থ্য সেবা পায় না , এবিষয়টিকে স্থানীয়রা জনগনের সাথে স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমের একধরনের উপহাস বলে মনে করেন। তাদের অভিমত হয় এগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম সঠিকভাবে চালু করা হোক নাহলে সরকারের দায়িত্বশীলদের উচিত বিকল্প কোন পদ্ধতি চালু করা। যাতে স্থানীয় জনসাধারণ সেগুলো থেকে কাঙ্খিত সেবা পায়।
টিএইচ