ঢাকা,

০২ আগস্ট ২০২৫


ঢাকা স্থিতিশীল না থাকলে মিশনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই”: এম্বাসেডর হুমায়ুন কবির 

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ২১:০৯, ৩১ জুলাই ২০২৫

ঢাকা স্থিতিশীল না থাকলে মিশনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই”: এম্বাসেডর হুমায়ুন কবির 

এম্বাসেডর হুমায়ুন কবির বলেন, আলাপ - আলোচনা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ সরকার থেকে আসে। আমাদের কূটনীতির সবচেয়ে বড় বাধা হল ঢাকা। ঢাকা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার শুরু এবং শেষ হয়। ঢাকা স্থিতিশীল না থাকলে মিশনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।

আমাদের অন্তর্মুখিতা বাইরের পৃথিবীকে বুঝতে বাঁধা সৃষ্টি করে। আমাদের সম্ভাবনা আমরা বাইরে নিতে পারি না। বাইরের সম্ভাবনাকে আমরা আভ্যন্তরিকভাবে কাজে লাগাতে পারি না। আমাদের নিরাপত্তার প্রধান সমস্যা হল সহমতের অভাব। অন্য দেশের সাথে সম্পর্কের কাঠামো কেমন হবে তা নিয়ে সহমত থাকতে হবে। নেপালে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহমত ছিল।

এখান থেকে আমাদেরকে সহমত গঠন করা শিখতে হবে। আইডেন্টিটি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতি এই তিনটিকে নিয়ে এবং এর সাথে  মানুষের চাহিদা যুক্ত করতে পারলে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি ভাল ও শক্তিশালী হবে। আমরা আমাদের ডিফেন্স ও ডিপ্লোম্যাসিকে নজর দেই নাই। স্বাধীন দেশ হিসেবে টিকে থাকতে চাইলে এই দুইটি জায়গাকে যত্ন নিতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে নিয়ে কোন সংস্কার হয় নাই।  গত ৫৪ বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে নিয়ে কেবল দুটি কমিশন হয়েছে। আমাদেরকে বাইরে বন্ধু তৈরি করতে হবে। এর জন্য কূটনীতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য ডিজিটাল ডিপ্লোম্যাসিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।       
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই)   সকাল সাড়ে  ৯ টায় “গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ” শীর্ষক ধারাবাহিক আয়োজনের অংশ হিসেবে, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর আয়োজিত ‘পররাষ্ট্রনীতি’ বিষয়ক আলোচনায় এম্বাসেডর হুমায়ুন কবির এ মন্তব্য করেন। 

সিজিএস এর সংলাপটি সিরডাপ (সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের সভাপতি এম্বাসেডর হুমায়ুন কবির; নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান (অবসরপ্রাপ্ত); বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন; এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু; সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী; জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী; বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন; সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী; সাবেক কূটনৈতিক এম শফিউল্লাহ; বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ইন্টার্ন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সাবেক চেয়ারম্যান এম্বাসেডর মুন্সি ফয়েজ আহমেদ; মায়ানমার-এর সাবেক কনস্যুলেট প্রধান ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর মোঃ এমদাদুল ইসলাম (অব.); কূটনীতিক শহীদুল ইসলাম; নৈতিক সমাজ বাংলাদেশের সংগঠক মেজর জেনারেল (অবঃ) আমসা আমিন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ; ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সিনিয়র গবেষণা ফেলো সাফকাত মুনির; সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশিজের চেয়ারম্যান এম এস সেকিল চৌধুরী; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি; গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) এর সভাপতি নুরুল হক নুর; এবি পার্টি’র সহকারী সদস্যসচিব ও উইমেন উইং এর কে-অর্ডিনেটর ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজ এর সভাপতি জিল্লুর রহমান। 

সংলাপের শুরুতে জিল্লুর রহমান বলেন, সংস্কার শব্দটি এখন একটি ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়েছে। পররাষ্ট্র নীতি আমাদের নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত পনেরো বছর আমদের সাথে পাকিস্তানের ভাল সম্পর্ক ছিল না। ভারতের সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ এখন এমন হয়েছে যে হয় তাদের নীতি হল আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন নাহলে চীনের সাথে থাকবেন। আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভাল হয়। বেকারত্ব হার বেড়েছে এবং মানবাধিকার অবস্থাও অস্বস্থিকর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক আমাদের এখনো টানাপোড়নে আছে। চীন ও ভারতের সাথে ব্যালেন্স করাটাও অনেক জরুরি।    

মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন, বিপ্লবের যেই আকাঙ্ক্ষা ছিল তা পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে প্রতিফলিত হয় নাই। ফ্যাসিজম একটা ইকোসিস্টেম। পুনর্গঠন করতে হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে সরাতে হবে। ফরেন পলিসিতে প্রাইভেট সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কেবল আমলা দিয়ে হবে না। আমাদেরকে ক্লাইমেট ডিপ্লোম্যাসি নিয়ে আমাদেরকে কাজ শুরু করতে হবে। প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য দূতাবাসগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। সার্ককে আবার পুনর্জীবিত করতে হবে। হিউমান রাইটস ডিফেন্ডার হতে হবে। আমাদের সামুদ্রিক নীতিমালা নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে এবং এটি বাইরের দেশের কাছে জানাতে হবে। পানি ও নদী কূটনীতি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পানি বণ্টন নিয়ে আমরা নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে চলেছে। সাইবার সিকিউরিটিতে আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। টেকনোলোজির ব্যাপারে নতুন করে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সব দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমারা কীভাবে চলতে পারি তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। 
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বাংলাদেশ মূলত আমদানি নির্ভর অর্থনীতি। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সুত্র হল রেমিটেন্স ও আরএমজি। আমরা রপ্তানি আমেরিকা ও ইউরোপে বেশি করে থাকি। আমরা অনেক বেশি ঋণ নির্ভর হয়ে গিয়েছি। সাইবার সিকিউরিটিকে গভীরভাবে বুঝতে হবে। সার্ক ছাড়া আর বিকল্প নেই আমাদের জন্য। আঞ্চলিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য সার্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ।  

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমাদের মত রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি অনেক জটিল। আমাদের এখন আমেরিকা বা চীন বা ভারতের প্রতি ঝোকা অনেক জটিল। হাসিনা অনেক সময় ধরে ভারতের প্রতি ঝুকে ছিল যার কারণে সে লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল। ভারতের সাথে আমাদের চেক্স এন্ড ব্যালেন্স করতে হবে। আমেরিকার ট্যারিফের জন্য আমাদের একটি বিপুল সংখ্যার মানুষ সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। এর সমাধানের জন্য আমাদের কোন এক দেশের প্রতি ঝুঁকে পড়তে হবে। নাহলে আমাদের নীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ পথ অবলম্বন করতে হবে। অথবা আমাদেরকে হিউমানিটেরিয়ান পথ অবলম্বন করতে হবে। আমার মতে তৃতীয় পথ অনুসরণ করাটা ভাল। আমাদের ফ্যাক্ট এর উপর ভিত্তি করে এবং সততার উপর নির্ভর করে এগোনো উচিত। 

আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, জনগণের উচিত তারা সিধান্ত করবে তাদের ট্যাক্সের টাকা কোন প্রোজেক্টে যাবে। এটি অনেক সাকসেসফুল হবে। ডায়াস্পরা কমিউনিটিদের পার্লামেন্টে প্রতিনিধি থাকা উচিত। এই সরকার অনেক কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে কোন কমিশন গঠন করে নাই। চীনের সাথে আমাদের সুদৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। 

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমতের ঘাটতি আছে। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক এখন ভাল নেই। ভারতের উপর আমরা ডিপেন্ডেন্ট হয়ে গিয়েছিলাম। ভিসা বা পানি নিয়ে আমরা বিকল্প চিন্তা করতে পারি নাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরুতে অনেক প্রিভোকেটিভ কথা বলেছিল। কিন্তু কেউ এই কথায় পা দেয় নাই। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নাই। অন্য কোন দেশের দালাল না হয়ে আমাদেরকে হতে হবে বাংলাদেশের দালাল। ন্যাশনাল কন্সেন্সাসের উপরে কোন সিধান্ত হতে পারে না। আমাদেরকে প্রবাসী বান্ধব নীতি করতে হবে। আমাদের দেশের সকল নীতি আমরা নির্ধারণ করব। 

মাহাদী আমিন বলেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সময়ে মতামতের মাধ্যমে সিধান্ত নেওয়া হত। আমাদেরকে এখন মতামতের মাধ্যমে সিধান্ত নিতে হবে। ম্যারিটাইম সিকিউরিটি শক্ত করতে হবে। আইটি সিকিউরিটিও শক্ত করতে হবে। রোহিঙ্গাদেরকে ডিগ্নিফাইড ভাবে রিপ্যাট্রিয়াট করতে হবে। পানি সংকট সমাধানের জন্য বাইল্যাটেরাল ও মাল্টিল্যাটারাল নেগসিয়েশন করতে হবে। 

পারভেজ করিম আব্বাসী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি সংকটে আছে। আমাদের নীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ ছিল। একটি বাস্তবতা হল এখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। আমরা এখানে বাজেভাবে ফেঁসে গেছে। বিগত সরকার ব্যালেন্স করার চেষ্টা করেছে। এখনও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও একই সমস্যা ফেস করছে। আমেরিকা আমাদের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। আমারিকাকে বাদ দিয়ে ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের বাজারে যাব এটি একটি বোকা চিন্তা। আমেরিকা তার নিজের দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানর জন্য সকল দেশকে জোরপূর্বকভাবে বিনিয়োগ করাচ্ছে। আমরা কাঁচামাল বেশি কিনে থাকি চীন থেকে। চীন থেকে কিনতে গেলে আমেরিকা শুল্ক বসিয়ে দিচ্ছে।

রাশিয়া ও আফগানিস্তান সংকটের সময় পাকিস্তান হিউমানিটেরিয়ান করিডোর করে দিয়েছিল যার জন্য এখনও পাকিস্তানে সমস্যা হচ্ছে যেমন ড্রাগস বা ওয়েপন সাপ্লাই। আমাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমাদের ঋণের বোঝা বাড়ছে। 

এম শফিউল্লাহ বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে তাকে তার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকতে হবে পররাষ্ট্র নীতির জন্য। রাজনৈতিক দলের ইন্টারফেয়ার করা উচিত না। ন্যাশনাল কন্সেন্সাস অন ফরেন পলিসিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের একমত হতে হবে। এটি না হলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে কাজও পরিবর্তন হয়ে যায়। এতে ডিপ্লোম্যাটসদের অনেক সমস্যা ফেস করতে হয়। রাজনীতিবিদদের কাছে অনুরোধ যে আপানারা আপনাদের অভ্যন্তরীণ পলিটিক্স দেশের মধ্যে রাখেন।

এইটা বাইরে নিবেন না এম্বাসেডর মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত থাকা দরকার। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের নীতি ঠিক করতে হবে। এলডিসি উত্তরণ খারাপ কিছু না। কিন্তু এর সাথে যেই দায়িত্ব আসে তা নিতে আমরা প্রস্তুত নয়। বরং আমাদেরকে এলডিসি উত্তরণকে কাজে লাগাতে হবে। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ এটি ভালভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলে আমেরিকার সাথে আমাদের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাবে এমন না। পররাষ্ট্র নীতি নির্ভর করে আমাদের অভ্যন্তরীণ শক্তির উপর। এর জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ঠিক করতে হবে। 

মেজর মোঃ এমদাদুল ইসলাম (অব.) বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ রিপোর্ট অনুসারে আমাদেরকে আরাকান আর্মির সাথে যোগাযোগ করতে। আরাকান আর্মির সাথে শিঘ্রই রোহিঙ্গাদের একটা সংঘাত হবে যা বাংলাদেশের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করবে। 

শহীদুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে সভেরেন্টি ও ইন্টেগ্রিটি প্রাধান্য পায় নি। আমাদের মধ্যে পররাষ্ট্র নীতি ও কূটনীতিকে এক করে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু এই দুইটি এক না। গনতান্ত্রিক পররাষ্ট্র নীতির জন্য জনগণকে প্রাধান্য দিতে হবে। জুলাই বিপ্লবের পরে মানুষের মধ্যে দাবি উঠেছে যে ভারত ও বাংলাদেশের সকল ট্রিটি জনগণের সামনে আনতে হবে। এটি তাড়াতাড়ি করা উচিত। 

মেজর জেনারেল (অবঃ) আমসা আমিন বলেন, আমাদের অর্থনীতি দুর্বল। বাংলাদেশে কোন ফরেন পলিসি ইন্টেলিজেন্স নেই। ভারত, আমেরিকা, ইসরায়েল সবারই ফরেন পলিসি ইন্টেলিজেন্স  আছে। 

ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, আমাদেরকে ট্রাক টু ডিপ্লম্যাসি করতে হবে। ‘ফ্রেন্ডশীপ টু অল, ম্যালিস টু নান’ হয়ে গিয়েছে ফ্রেন্ডশীপ টু ওয়ান। আমেরিকা আগে আমাদেরকে বলেছিল ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক নরমাল করতে। এখন নন-ডিস্ক্লোসারের মধ্যে এটি চলে আসতে পারে। তখন আমাদের কিছু করার থাকবে না। 

ববি হাজ্জাজ বলেন, আমি যখন বাইরে অবস্থানরত নাগরিকের সাথে কথা বলি যে তারা এম্বাসিতে গিয়ে কোন সাহায্য পায় না। সরকার পতনের পরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনো আগের লোকেরা বহাল আছে। এটি ভাল নয়। আগের সরকার দাসত্ব পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতা থাকতে হবে। নন-ডিস্ক্লোসার নীতি করাটা ঠিক হয় নি। ভারতের সাথে নদীর পানি বণ্টন কীভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ভারত, আমেরিকা বা চীনের সাথে পররাষ্ট্র নীতির ব্যালেন্স করতে হবে। ভারত একটা রিয়ালিটি। ভারতের সাথে আমাদের নতুন সম্পর্কটা কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। 

সাফকাত মুনির বলেন, পররাষ্ট্র নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নিয়ে কোন কমিশন হয় নি। পররাষ্ট্র নীতি গতিশীল হবে না যতক্ষণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতিশীল হবে। গত ১৬ বছর আমাদের কোন পররাষ্ট্র নীতি ছিল কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান। কূটনীতিবিদদের বেতন অপেক্ষাকৃত অনেক কম অন্য দেশের তুলনায়। ডায়াস্পরা ডিপ্লোম্যাসি নিয়ে নতুন অনুবিভাগ তৈরি করতে হবে। রাষ্ট্রের অন্য ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য যেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেরকম উদ্যোগ পররাষ্ট্র নীতিতে নেওয়া হয় নি। যোগ্য ব্যাক্তিদেরকে পররাষ্ট্র নীতির সাথে যুক্ত করতে হবে। ‘সকলের সাথে বন্ধুত, ম্যালিস টু নান’ এমন স্লোগানভিত্তিক পররাষ্ট্র নীতির যুগ এখন আর নেই। 
এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রতিটি দেশের মিশনের অবস্থা ভাল নেই। ট্যারিফের বিষয়ে আমরা অনেক দেরীতে কথা বলা শুরু করেছি। আমেরিকা রাজনীতির সাথে বাণিজ্য একসাথে করেছে। আমাদের উচিত বাণিজ্য নিয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদেরকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এখানে কেবল কূটনীতিবিদদের থাকলেই হবে না। প্রাইভেট সেক্টর নিয়ে যারা অভিজ্ঞ, যারা এই ডেটা নিয়ে কাজ করে তাদেরকে এখানে থাকতে হবে। 

জোনায়েদ সাকি বলেন, আমদের এখন জাতীয় স্বার্থের জন্য সিধান্ত নিতে হবে। নেগোসেয়েশন এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। নেগোসেয়েশন করার দক্ষতা থাকতে হবে। এরজন্য একটা রাজনৈতিক কাঠামো ঠিক করতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ, যে আমরা কি আমাদের সিধান্ত নিতে পারছি কিনা। আমদেরকে জাতীয় স্বার্থের জন্য সিধান্ত নিতে হবে। আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যাওয়া যাবে না। 

নুরুল হক নুর বলেন, পররাষ্ট্র নীতির আগে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি শক্ত করতে হবে। আমাদের কি ২৫ টি বোয়িং কেনার ক্ষমতা আছে। এটি করা হয়েছে আমেরিকাকে খুশি করার জন্য। আমাদেরকে বহুমুখী রপ্তানি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। আমার মনে হয় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছোট-খাটো একটা সংঘাত হবে, যেমনটি হচ্ছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াতে। 

ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি বলেন, শেখ হাসিনার নীতি “সকলের সাথে বন্ধুত, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ হয়ে গিয়েছে ফ্রেন্ডশীপ টু ওয়ান। আমরা কোন বেসিক পররাষ্ট্র নীতি দাড়া করাতে পারি নাই। ভারত, চীন বা আমেরিকাকে উপেক্ষা করার মত অবস্থা আমাদের নেই। এইটা রিয়ালিটি। ট্যারিফের মাধ্যমে আমেরিকা আমাদের পররাষ্ট্র নীতি ঠিক করে দিচ্ছে। এর কারণ আমাদের দক্ষ লোক নেই। এই সরকারকে সাহায্য করার মত কোন দক্ষ লোক নেই। গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে আমাদের কোন আলোচনা বা চিন্তা নেই। ২০২৬ সালে আমরা গঙ্গার পানি বণ্টন ও এলডিসি থেকে উন্নত নিয়ে আমরা একটা বড় ধাক্কা খাব।

টিএইচ

News