ঢাকা,

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫


জ্বালানি খাতে নারীদের শক্তিশালী অংশীজন হিসেবে বিবেচনার আহ্বান 

তারেক হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত হয়েছে: ১৮:৫৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জ্বালানি খাতে নারীদের শক্তিশালী অংশীজন হিসেবে বিবেচনার আহ্বান 

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)-এর উইমেনস এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি (উই) প্রকল্পের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) উইমেন অ্যান্ড এনার্জি কার্নিভাল ২০২৫ আয়োজন করা হয়। 

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে উদ্ভাবক, উন্নয়ন সহযোগী, নীতি প্রভাবক, যুবনেতা ও তৃণমূল নারীরা এক স্থানে একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেন। একই সাথে নারীদের স্বীকৃতিও জানানো হয়।
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরকে কীভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও জেন্ডার-সংবেদনশীল করা যায় সে বিষয়ে আলোচনার সাথে সাথে প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নারীদের জীবনের গল্প বলা হয় ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এমজেএফ-এর পরিচালক - রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স প্রোগ্রাম বনশ্রী মিত্র নিয়োগী বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক জ্বালানিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রয়োজন। 
পাহাড়ি এলাকার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, দেশের সব জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি না থাকায় নারীদের কাজে অনেক সময় নষ্ট হয়, তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হলেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।

এমজেএফ-এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, উইমেন অ্যান্ড এনার্জি কার্নিভাল নারীর কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করার এবং বাংলাদেশকে টেকসই ও সবুজ রূপান্তরের কেন্দ্রে নারীকে স্থান দেওয়ার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। ধীরে ধীরে সব জীবাশ্ম জ্বালানি-ভিত্তিক জ্বালানি উৎস শেষ হয়ে যাবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ছাড়া আমি অন্য কোনো বিকল্প উৎস দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়াও তিনি, নারীর অদৃশ্য শ্রমের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন) এবং উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক উপ-প্রধান নায়োকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রম। তিনি জলবায়ু ও জ্বালানি বিষয়ক নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে এখনই নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে আন্তরিকভাবে ভাবার সময়।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) উপসচিব মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা যদি জলবায়ু নিয়ে কথা বলি, তাহলে সেখানে নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিন ফাইন্যান্সের মতো ক্ষেত্রে নারীর অবদান অনেক সময় পুরুষদের থেকেও বেশি। তিনি নারীদের স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) হিসেবে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ এক জায়গায় উৎপাদন হয়ে অন্যত্র সরবরাহ হয় - এটিকে কেন্দ্রীয় উৎপাদন বলা হয়। কিন্তু ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বদলাবে, বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। রক্ষণাবেক্ষণের জায়গায় নারীদের ভূমিকা হবে অনস্বীকার্য। তিনি জাস্ট ট্রানজিশন বাস্তবায়নে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি কাঠামোয় জেন্ডার দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। 

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সংগঠনের সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, সামাজিক আন্দোলনকে শুধু প্রজেক্ট আকারে দেখলে হবে না। নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আমরা নারীদের স্টেকহোল্ডারই (অংশীজনই) মনে করি না। শুধু জনপ্রতিনিধিদের নিয়েই নয়, কাজটি সবাইকে নিয়ে করতে হবে।

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (পরিবেশ ও জ্বালানি) তানজিনা দিলশাদ বলেন, নেতৃত্বের জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ এখনো কম। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেশি, যা একটি ইতিবাচক দিক।
তিনি জ্বালানি রূপান্তরে নারী যেন পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

উইমেন অ্যান্ড এনার্জি কার্নিভাল ২০২৫ - মনে করিয়ে দেয় নারীর ক্ষমতায়ন কেবল অধিকার নয়, বরং উদ্ভাবন, স্থিতিস্থাপকতা ও অগ্রগতির শক্তিশালী চালিকাশক্তি। কার্নিভালটি বাংলাদেশের টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যতের পথে এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারীরা। নাবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নারীর অংশগ্রহণ বিষয়ে আরও দুইটি প্যানেল আলোচনা, উদ্ভাবনের স্বীকৃতি ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়

টিএইচ

News