
ছবি সংগৃহীত
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের নবম দিনে রহস্যজনকভাবে কেঁপে উঠল ইরানের মাটি। শনিবার ইরানের সেমনান অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৫.১ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। স্থানীয় সময় অনুযায়ী দুপুর নাগাদ সংঘটিত এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সেমনান শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।
এই ভূমিকম্পকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে জোরালো চর্চা। প্রাকৃতিক নাকি মানবসৃষ্ট—তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। চলমান যুদ্ধে ইরান ও ইসরায়েলের পারমাণবিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অনেকে সন্দেহ করছেন, এটি হয়তো গোপনে চালানো ইরানের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার ফল অথবা ইসরায়েলের কোনও গোপন হামলার প্রতিক্রিয়া।
ইরানের ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার একটি বড় অংশই ছিল দেশটির পরমাণু স্থাপনার ওপর। সূত্রের দাবি, ইরানের হাতে বর্তমানে ২৭৫ কেজিরও বেশি ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে—যা একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে যথেষ্ট।
তবে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা এই আশঙ্কাকে নাকচ করে দিয়েছেন। মার্কিন ভূগর্ভীয় জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, এটি ছিল স্বাভাবিক ভূমিকম্প। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক ভূমিকম্পে ‘পি’ (Primary) এবং ‘এস’ (Secondary) উভয় ধরনের তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, পারমাণবিক বিস্ফোরণে সাধারণত শুধু ‘পি’ তরঙ্গ দেখা যায়। সেমনানের ভূমিকম্পে উভয় তরঙ্গ ধরা পড়েছে, যা একে প্রাকৃতিক ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান 'এলপাইন হিমালয়ান সেসমিক বেল্ট'-এর ওপর অবস্থিত হওয়ায় এটি ভূমিকম্পপ্রবণ একটি অঞ্চল। প্রতিবছর এখানে গড়ে প্রায় ২১০০ ভূমিকম্প হয়, যার মধ্যে প্রায় ১৫-২০টির মাত্রা রিখটার স্কেলে ৫ ছাড়িয়ে যায়।
তবুও ভূমিকম্পের সময় ও প্রেক্ষাপট নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। কারণ, ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকটি পরমাণু স্থাপনায় গোপন হামলা চালায় এবং একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। এরপর থেকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে ফের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
এই ভূমিকম্পের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ইরান বা ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বক্তব্য দেয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মহল পুরো ঘটনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান এখনও পরমাণু বোমা তৈরির কাছাকাছি পৌঁছায়নি। অন্তত আরও তিন বছর সময় লাগবে তাদের।
ইউ