ঢাকা,

২০ জুন ২০২৫


মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা: ইরানে মার্কিন হস্তক্ষেপে বড় সংঘাতের শঙ্কা

বিজনেস আই ডেস্ক

প্রকাশিত হয়েছে: ১৭:৩২, ১৯ জুন ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা: ইরানে মার্কিন হস্তক্ষেপে বড় সংঘাতের শঙ্কা

ছবি: ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ...

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইরানে যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তা ভয়াবহ যুদ্ধের সূচনা করবে। বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সামরিক পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে।

এদিকে, ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালের ওপর ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েল এই হামলাকে ইচ্ছাকৃত ও যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছে। তবে ইরান বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল সামরিক গোয়েন্দা ঘাঁটি, যা ওই হাসপাতালের পাশেই অবস্থিত। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাসপাতালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেকে আহত হয়েছেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, এই হামলার দায়ে ইরানকে চরম মূল্য দিতে হবে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে তার ‘যুদ্ধাপরাধের’ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ইরানের বিরুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি দেশটির আরাক হেভি-ওয়াটার পারমাণবিক চুল্লিতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এটি ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা, যেখানে প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ এবং এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় অভিযোগ করেছে। তারা বলছে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পেছনে সংস্থাটির পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট বড় ভূমিকা রেখেছে। যদিও গ্রোসি দাবি করেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো চেষ্টা করছে—এমন প্রমাণ আইএইএর কাছে নেই।

এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে সম্ভাব্য সামরিক হামলার পরিকল্পনায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন, যদিও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম দাবি করেছেন, ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য মার্কিন সামরিক শক্তি ব্যবহার করা উচিত।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। তারা বলেছে, খামেনিকে হত্যার হুমকি দেয়া হলে তার ভয়াবহ পরিণতি হবে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, এই ধরনের হুমকি শুধুই বেপরোয়া নয়, এটি মুসলিম বিশ্বের জন্য অবমাননাকর।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার এই সংঘাতে উভয় দেশেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ইরানে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস। আহত হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৩২০ জন। তবে ইরান সরকার এখনো প্রতিদিনের হতাহতের বিস্তারিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে না।

এদিকে, পরিস্থিতি শান্ত করতে ফ্রান্স আলোচনার মাধ্যমে একটি কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষকেই বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। নিউ ইয়র্কে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে ইরানে সম্ভাব্য মার্কিন হামলার বিরোধিতা করেছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র যেন এই সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে।

সব মিলিয়ে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত একটি বিস্তৃত যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল এখন উত্তেজনা কমাতে তৎপর হলেও কোনো পক্ষই আপাতত পিছু হটার ইঙ্গিত দিচ্ছে না। পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
 

ইউ

News