ঢাকা,

১৮ জুন ২০২৫


যুদ্ধবিরতি নয়, ইরান-ইসরায়েলের ‘স্থায়ী সমাধান’ চান ট্রাম্প

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ২০:৩০, ১৭ জুন ২০২৫

যুদ্ধবিরতি নয়, ইরান-ইসরায়েলের ‘স্থায়ী সমাধান’ চান ট্রাম্প

টানা পঞ্চম দিনের মতো ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কেবল যুদ্ধবিরতি নয়, বরং ‘স্থায়ী সমাধান’ চান।

কানাডায় জি৭ সম্মেলন থেকে আগেভাগেই যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে মঙ্গলবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যুদ্ধবিরতি চাই না। আমরা যুদ্ধবিরতির চেয়েও ভালো কিছু চাই।

’ একই সাথে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, ‘ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না।’

এর আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাজ করতে জি৭ সম্মেলন ছেড়ে আসার দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি লেখেন, ‘আমি কোনোভাবে, কোনো রূপে বা কোনো চেহারায় ইরানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার চেষ্টা করিনি। তারা যদি কথা বলতে চায়, জানে কিভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের পারমাণবিক আলোচনার ষষ্ঠ দফা রবিবার ওমানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে আকস্মিক বোমা হামলা চালানোর পর তেহরান আলোচনায় অংশ নেওয়া বাতিল করে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই শনিবার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমনভাবে আচরণ করেছে, যা আলোচনাকে অর্থহীন করে তোলে। আপনি একদিকে আলোচনার কথা বলবেন, আর অন্যদিকে ইসরায়েলি শাসকদের দিয়ে আমাদের ভূখণ্ডে হামলা চালাতে দেবেন—এটা তো চলতে পারে না।

তবে হামলার আগের কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইরানে ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতা করেছিলেন এবং বলেছিলেন, তিনি কূটনৈতিক সমাধানকে অগ্রাধিকার দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি হামলাগুলোর প্রশংসা করে এগুলোকে ‘দারুণ’ বলে উল্লেখ করে বলেন, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আলোচনায় এই বোমাবর্ষণই হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা।

ইসরায়েলি হামলার আগে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, যেখানে কোনো ধরনের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থাকবে না বলে বলা হয়। তেহরান নিজস্ব পাল্টা প্রস্তাব দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল আলোচনার অগ্রগতির জন্য। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগোতে বাধা দিতেই তারা এই হামলা চালিয়েছে।

এর জবাবে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছে, যাতে ২০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইরানি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যে ২২০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।

‘কেউ থামেনি’
এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ইসরায়েল ইরানে হামলা কমাবে কিনা। জবাবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, এর সম্ভাবনা কম।

তিনি বলেন, ‘আগামী দুই দিনের মধ্যেই আপনারা তা জেনে যাবেন। এখন পর্যন্ত কেউ থামেনি।’

ট্রাম্প আরো জানান, মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক তার দূত স্টিভ উইটকফ বা ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সকে তিনি ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় পাঠাতে পারেন, তবে সেটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।

‘তেহরান খালি করো’
জি৭ সম্মেলন ছাড়ার আগে ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়ায় হঠাৎ সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘সবার এখনই ইরানের রাজধানী তেহরান ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত। ইরানের উচিত ছিল সেই চুক্তিতে সই করা, যা আমি বলেছিলাম। কী দুর্ভাগ্যজনক, আর কত মানুষের জীবন যে নষ্ট হলো।’

তেহরান খালি করার সতর্কবার্তার পেছনে তার ভাবনা কী ছিল—এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শুধু চাই মানুষ নিরাপদ থাকুক।’

চীন এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলে, এতে পরিস্থিতি শান্ত না হয়ে বরং আরো উত্তপ্ত হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ‘হুমকি ও চাপ প্রয়োগ পরিস্থিতি নিরসনে কোনো কাজে আসে না, বরং এটি শুধু সংঘাত আরো বাড়িয়ে তোলে ও বিস্তৃত করে।’

টিএইচ

News