ঢাকা,

১৩ জুন ২০২৫


ট্রাম্পের অভিবাসন অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ: লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১০:৪৯, ১১ জুন ২০২৫

ট্রাম্পের অভিবাসন অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ: লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি করা হয়েছে। শহরটির মেয়র কারেন ব্যাস কারফিউ জারির এই ঘোষণা দিয়েছেন।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী কঠোর অভিযানের প্রতিবাদে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে শহরের কেন্দ্রীয় একটি অংশে কারফিউ ঘোষণা করেন মেয়র কারেন ব্যাস।

আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

মেয়র কারেন ব্যাস জানিয়েছেন, এই কারফিউ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। কারফিউটি শহরের মাত্র এক বর্গমাইল (প্রায় ২.৬ বর্গকিলোমিটার) এলাকা জুড়ে কার্যকর হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ব্যাস বলেন, “এই বিক্ষোভের কারণে এখন পর্যন্ত অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। শুধু গত রাতেই ২৩টি দোকান লুট করা হয়েছে। আপনি যদি ডাউনটাউন এলএ-তে গিয়ে থাকেন, দেখবেন সর্বত্রই গ্রাফিতি- যা ব্যবসা ও সম্পত্তির বিশাল ক্ষতি করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার বার্তা হলো- যদি আপনি ডাউনটাউন এলএ-তে বসবাস না করেন বা কাজ না করেন, তবে দয়া করে ওই এলাকা এড়িয়ে চলুন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কারফিউ ভঙ্গকারীদের গ্রেপ্তার করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মেয়র ব্যাস আরও জানান, এই কারফিউ কয়েকদিনের জন্য বহাল থাকতে পারে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, কারফিউ কেবল শহরের একটি ছোট অংশেই (প্রায় ৫০২ বর্গমাইল আয়তনের মধ্যে মাত্র ১ বর্গমাইল) জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমি এটা স্পষ্ট করতে চাই যে, ঘটনাগুলো ডাউনটাউনের একটি ছোট অংশে ঘটলেও যেভাবে তা মিডিয়ায় উপস্থাপিত হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যেন গোটা শহর জুড়ে সঙ্কট চলছে। বাস্তবতা তা নয়।”

আল জাজিরা বলছে, আংশিক কারফিউ জারির এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসন বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলেসে টানা পাঁচদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে এবং এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নিউ ইয়র্ক, শিকাগো ও আটলান্টাসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও বহু শহরে।

এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম ট্রাম্প প্রশাসনের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি অঙ্গরাজ্যবাসীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, “ওখান থেকেই অবনতি শুরু হলো। প্রেসিডেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে এমনভাবে ব্যবহার করছেন যেন তারা কোনও শত্রু দেশের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।”

নিউজমের ভাষায়, “প্রেসিডেন্ট যাদের টার্গেট করছেন তারা সন্ত্রাসী নয়, তারা তো আমাদের সমাজের সাধারণ সদস্য—রান্নাঘরের কর্মী, মালী, দিনমজুর, দর্জি। এটা শক্তির বহিঃপ্রকাশ নয়, এটা দুর্বলতা। ট্রাম্পের সরকার আমাদের কমিউনিটিকে নিরাপদ করার চেষ্টা করছে না, বরং ভয়ভীতি ছড়িয়ে আমাদের আঘাত করছে। এবং মনে হচ্ছে, এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।”

তিনি আরও বলেন, “যদি আমাদের কাউকে কোনও পরোয়ানা ছাড়াই, শুধু সন্দেহ বা গায়ের রঙের ভিত্তিতে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া যায়, তাহলে আমরা কেউই নিরাপদ নই। স্বৈরশাসকরা শুরুতে এমন মানুষদের ওপর আক্রমণ চালায়, যারা আত্মরক্ষা করতে অক্ষম। কিন্তু তারা সেখানেই থেমে থাকে না।”

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার নিজের অবস্থানে অটল থাকার বার্তা দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলিনার ফোর্ট ব্র্যাগ সেনাঘাঁটিতে মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “আমাদের বীর সেনারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিদেশের মাটিতে দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন, শুধু এই দৃশ্য দেখার জন্য নয় যে, এখন নিজ দেশের ভেতরেই তৃতীয় বিশ্বের মতো বিশৃঙ্খলা ও অনুপ্রবেশে দেশ ধ্বংস হচ্ছে — যেমনটা ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটছে।

তিনি বলেন, “আমি একজন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে তা হতে দেব না। এটা কখনোই ঘটতে দেব না।”

টিএইচ

News