
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে বুধবার দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিনভর তাণ্ডব চালিয়েছেন গোপালগঞ্জে।
আজ বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে উঠেছে গোপালগঞ্জের সহিংসতার এই ঘটনা। সেখানে সাংবাদিকরা এই সহিংসতার বিষয়ে নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘আমরা আমাদের অঞ্চলের সব ঘটনাপ্রবাহ ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করি এবং যা ঘটছে তা বিবেচনায় নিই।’’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়েও ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চান এক সাংবাদিক। ওই সাংবাদিক বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে ভারত বারবার বলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও একটি প্রধান রাজনৈতিক দল আগামী বছরের শুরু কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছে। আপনি কী এটাকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক মনে করেন?’’
জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার। আমরা বারবার বলেছি, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এমন নির্বাচনকে স্বাগত জানাই; যা গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সকল পক্ষকে এতে অন্তর্ভুক্ত করে।’’
সংবাদ সম্মেলনে অপর এক সাংবাদিক গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির পদযাত্রা ঘিরে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘আমরা আমাদের অঞ্চলের সব ঘটনাপ্রবাহ ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করি এবং যা ঘটছে তা বিবেচনায় নিই। প্রয়োজনে আমাদের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নিই।’’
ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলার বিষয়ে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি নিয়ে বলতে পারি, আমরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেখেছি। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলক অংশীদারত্ব চাই।’’
তিনি বলেন, আমরা উভয় দেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বৈঠক করেছি। আমাদের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশ সফর করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মাঝে বৈঠকও হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কিছু সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে, যার মধ্যে উন্নয়ন অংশীদারত্বও রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়টি দেখা উচিত।
বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘ভারতের সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ, মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি এবং শিক্ষাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভিসা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।’’
গত বছরের জুলাই-অগাস্ট থেকেই বাংলাদেশে ভারতের স্বাভাবিক ভিসা কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভারতের ভিসা পাওয়া যাচ্ছিল না বলে অনেক বাংলাদেশি নাগরিককে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এই বিষয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, আমরা বাংলাদেশে ভিসা দিচ্ছি। নানা কারণেই ভিসা দেওয়া হচ্ছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন কারণে ভিসা দিয়ে আসছি। যেমন, ভ্রমণ, চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে, শিক্ষার্থীদের জন্য ইত্যাদি। আমরা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভিসা প্রদান করছি।
তবে ভারত সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশিদের ঠিক কত সংখ্যক ভিসা দিয়েছে, সেই নির্দিষ্ট সংখ্যা জানাতে পারেননি তিনি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, সঠিক সংখ্যাটি আপনাদের পরে জানাতে হবে। এটা আমাকে জেনে বলতে হবে।
টিএইচ