
১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে রিকশাচালক মো. আজিজুর রহমানের ওপর হামলা এবং পরবর্তীতে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)।
আজ রবিবার ( ১৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে বলা হয়, শ্রদ্ধা জানাতে আসা একজন সাধারণ নাগরিককে এভাবে মারধর ও অপরাধীর মতো আচরণ করা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত এবং নিন্দনীয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রিক্সা চালক আজিজুর রহমান তার সারাদিনের কষ্টার্জিত অর্থ (৪০০ টাকা) দিয়ে একটি পুষ্পস্তবক কিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে সেখানে উপস্থিত একটি উচ্ছৃঙ্খল গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘবদ্ধ সহিংসতার শিকার হন এবং পরে পুলিশ তাকে আটক করে। ১৬ আগস্ট তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে “জুলাই আন্দোলন ২০২৪”-এর একটি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি দেখিয়ে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয় এবং কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। যদিও আজকে তার জামিন আবেদন মঞ্জুর হয়েছে বলে জানা যায়।
এভাবে কারো প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে এ ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতার মুখোমুখি হওয়া, পরবর্তীতে বেআইনি আটক ও কারাবরণের ঘটনা বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ সমূহ যথাক্রমে ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ৩১ (আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার), ৩২ (জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ), ৩৬ (চলাফেরার স্বাধীনতা), ৩৭ (সমাবেশের স্বাধীনতা) এবং ৩৯ (চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা) সুস্পষ্ট ও আইনের শাসনের প্রতি অমার্জনীয় অবমাননা।
এইচআরএফবি মনে করে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে নিছক হয়রানি করার উদ্দেশ্যে অপ্রাসঙ্গিক ও পুরোনো মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে একজন নিরীহ নিরপরাধ নাগরিককে “সন্ধিগ্ধ আসামি” বানিয়ে কারাগারে পাঠানো কেবল বেআইনি নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলপ্রয়োগের উদাহরণ। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে সাধারণ নাগরিককে কৌশলে আতঙ্কগ্রস্ত করা/দমন করারর নামান্তর।
এ ঘটনা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান করে যে, ভিন্নমতকে নিয়ন্ত্রণ ও দমন করতে ব্যক্তি-স্বাধীনতা এবং সংবিধান প্রদত্ত অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। ক্ষমতার প্রতি নিঃশর্ত অনুগত না হলে তাঁকে দমন করা হবে এমন এক প্রাতিষ্ঠানিক বার্তা ছড়ানোর প্রবণতা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, যা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের জন্য একটি গুরুতর অশনিসংকেত।
এইচআরএফবি জোরালোভাবে দাবি করছে, রিকশাচালক আজিজুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বেআইনি হামলাকারীদের অতি দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং আজিজুর রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জুলাই আন্দোলনের মামলায় জড়িয়ে নিরীহ নিরপরাধ নাগরিককে হয়রানি অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে এ ধরণের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে; সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে এইচআরএফবি।
রাষ্ট্র যদি ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা একজন সাধারণ নাগরিককে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করায়, তবে সেটা স্পষ্টতই সংবিধান ও মানবাধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত। এ ধরনের নিপীড়নমূলক প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের কঠোরভাবে জবাবদিহিতারআওতায় আনতে হবে।
টিএইচ