
সমাজ পরিবর্তনের কাজটি সহজ নয়, ভুক্তভোগীদের ন্যায় বিচার পেতে তাদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা: ফওজিয়া মোসলেম।
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আইনগত সহায়তা কার্যক্রম আরও সমন্বিতভাবে করার লক্ষ্যে সহায়তা গ্রহণ কারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় ডা: ফওজিয়া মোসলেম একথা বলেন।
আজ ২৫ আগস্ট (সোমবার) বিকাল সাড়ে তিনটায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মত বিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা: ফওজিয়া মোসলেম। সভার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বক্তব্য দেন লিগ্যালএইড সম্পাদক রেখা সাহা,বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা। তথ্য ভিত্তিক লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রোগ্রাম অফিসার (কাউন্সেলিং) সাবিকুন নাহার। প্যানেল আইনজীবীদের মধ্যে বক্তব্য দেন আইনজীবী আমিনুল ইসলাম। আইনগত সহায়তা গ্রহণকারীদের মধ্যে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, সুমাইয়া সারা, হাবিবা, মৌসুমী আক্তার ইভা, মাকসুদা, সোনিয়া আক্তার এবং আসাদ আল সায়েম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. দীপ্তি শিকদার।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী নীরবে থাকলে কোনদিনই নারীর সমস্যার সমাধান হবে না। নারীকে তার অধিকার চাইতে হবে: এজন্য তার মধ্যে সাহসের সঞ্চার করতে হবে, মামলা পরিচালনার জটিলতা মোকবেলায় চাপ সৃষ্টি করতে সাংগঠনিকভাবে সংগঠিত ও শক্তিশালী হতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে, অধিকার অর্জন করতে নিজের মধ্যেও কিছুটা দায়িত্ববোধ তৈরি করতে হবে; ভুক্তভোগী নারীদের মামলা করতে গেলে হয়রানি বন্ধে আইনী প্রক্রিয়া পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে, এজন্য আইনজীবীদের সহায়তা প্রয়োজন।
সভার উদ্দেশ্য সম্পর্কে লিগ্যালএইড সম্পাদক রেখা সাহা বলেন, সেবাগ্রহীতাগণ মহিলা পরিষদেরই একজন, সেবাগ্রহীতাদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক যত ভালো হবে, সেবা দেয়ার প্রক্রিয়া তত কার্যকর হবে, উপকারী হবে। বাংলাদেশের নারীরা পরিবারের সদস্য দ্বারা, এর বাইরে জনপরিসরেও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন এবং তারা বিভিন্ন ধরণের সহায়তা চেয়ে থাকেন। আইনী সেবা দান প্রক্রিয়া আরো কতটা বিস্তৃতপরিসরে সেবাগ্রহীতা বান্ধব করা যায় সেবিষয়ে আলোচনার জন্য আজকের সভার আয়োজন করা হয়েছে।
বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, সাংগঠনিক আইনী সহায়তা কার্যক্রম একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার নারীদের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের বিভিন্ন স্তরে রয়েছে। অন্যদিকে আইনী সেবা প্রক্রিয়ায় বহাল থাকা বৈষম্যমূলক পরি¯িথতির উত্তরণে সংগঠন কাজ করছে, এক্ষেত্রে সংগঠন আইনী সেবা গ্রহীতাদের মতামত ও পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন,নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় নারী পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একজন নারী যাতে পরিবারে সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে মামলা পরিচালনা করা হয়। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে সালিশী কার্যক্রম পরিচালনায় বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের মতামত, নারী-পুরুষের সমতার প্রেক্ষিত বিবেচনা করা হয়, কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিকূলতা কি, পরিবার এগিয়ে আসছে কিনা প্রভৃতি বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে।
তথ্য ভিত্তিক লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনে প্রোগ্রাম অফিসার (কাউন্সেলিং) সাবিকুন নাহার সহিংসতার ধরনসমূহ, সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাদের জন্য সাংগঠনিক সেবাদান পদ্ধতিসমূহ যেমন: লিগ্যাল কাউন্সেলিং, আবেদন গ্রহণ, সালিশী প্রক্রিয়া, মামলায় সহায়তা, সহিংসতা পরবর্তী মানসিক সেবা এবং গত এক বছরে আইনী সেবা প্রদানের (আইনগত পরামর্শ, সরাসরি অভিযোগ গ্রহণ, সালিশী বৈঠক, ফলোআপ সালিশী সভা, সালিশী সভায় মীমাংসা এবং সালিশী সভার মাধ্যমে দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায় ইত্যাদি) হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন।
প্যানেল আইনজীবী অ্যাড. আমিনুল ইসলাম বলেন আইনী সহায়তা গ্রহণ করতে আমাদের সুসংগঠিত হতে হবে; নারীর প্রতি বিভিন্ন ধরণের সহিংসতা প্রতিরোধে পাড়ায় পাড়ায় আইনী সহায়তাকারীদের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটি গড়ে তুলতে হবে। নির্যাতনের শিকার নারীদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। তাদের প্রত্যেকে এখন ব্যক্তিজীবনে ভালো আছে।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, সহিংতার শিকার অনেক নারী সংসার টিকিয়ে রাখতে সহিংসতার ঘটনা গোপন করে যায়। ধর্ষণের শিকার নারীদের এখনো দোষারোপ করা হয়, আপোষের জন্য চাপ দেওয়া হয়, দুর্বল তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, মেয়েরা দূর্বল নয়, তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
উক্ত মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রীবৃন্দ, সেবাগ্রহণকারীগণ, প্যানেল আইনজীবী এবং কর্মকতাগণ উপস্থিত ছিলেন।
টিএইচ