
বাংলাদেশ যখন ব্যাপকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে, তখন এই গবেষণা এবং কার্যক্রম, পদ্ধতিগত সমাধানের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আশা করে, এই গবেষণার ফলাফল সরকারী নীতিমালা, দাতা সংস্থার অগ্রাধিকার এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচির নকশায় বিশেষ করে জলবায়ু-সংবেদনশীল এলাকায়, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার; পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াস) এবং টেকসই জীবিকা বিষয়ক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আজ বুধবার প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জাতীয় পর্যায়ের একটি কর্মশালায় স্কোপিং স্টাডির ফলাফল উপস্থাপন কালে বিশিষ্টজনেরা একথা বলেন ।
“জলবায়ু-সংবেদনশীল দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের অবস্থানসমূহে প্রজনন স্বাস্থ্য, ওয়াশ এবং জীবিকার পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা শীর্ষক গবেষণায় দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের জলবায়ু, প্রজনন স্বাস্থ্য, ওয়াশ ও জীবিকার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা ইত্যাদি বিষয় গুলো তুলে ধরা হয়।
এই কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল মাঠ পর্যায়ের গবেষণার মূল ফলাফল ও যাচাইকৃত তথ্য উপস্থাপন, বহুমুখী সংলাপের সুযোগ তৈরি, এবং জলবায়ু সহনশীল ও জেন্ডার-রূপান্তরমূলক কর্মসূচির জন্য অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় সাধন। গবেষণাটিতে গুরুত্বপূর্ণ সেবার ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এবং প্রমাণভিত্তিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ও নীতিমালার জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ । তিনি বলেন, “এই গবেষণা আমাদের দেখিয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন কেবল পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ নয়, এটি একটি গভীর মানবিক উন্নয়ন সংকটও বটে। গবেষণার ফলাফলে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে, প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার ,পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) এবং জীবিকা, এই তিন ক্ষেত্রে পারস্পরিক দুর্বলতা রয়েছে, যা নারী, তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ফেলছে। এই ধরনের গবেষণা আমাদের উপযুক্ত কৌশল প্রণয়নে অত্যন্ত সহায়তা করবে”।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. আশরাফি আহমদ, এনডিসি, মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর (DGFP); মোঃ মোমেনুল ইসলাম, পরিচালক, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং নায়োকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রম, ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং ডেপুটি হেড অফ ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন, সুইডেন দূতাবাস, বাংলাদেশ।এই কর্মশালায় সরকার, উন্নয়ন সংস্থা, জাতিসংঘ সংস্থা, নাগরিক সমাজ, একাডেমিয়া এবং গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এবং উপকূলীয় অঞ্চলে সমন্বিত জেন্ডার -সংবেদনশীল ও জলবায়ু সহনশীল হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজন নিয়ে আলোচনা করেন।
আশরাফী আহমদ, এনডিসি, বলেন, “এই গবেষণার ফলাফল আমাদের একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত শুধু পরিবেশগত নয়, এটি স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার সংকটও বটে। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পরিবার পরিকল্পনা কাঠামোকে জলবায়ু ও জেন্ডার সংবেদনশীল করে গড়ে তুলতে হবে।”
কর্মশালায় গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য, একাডেমিয়া এবং যুব উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে একটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের “দুর্বার” কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়, যা উপকূলীয় বাংলাদেশে জলবায়ু ন্যায়বিচার ও জেন্ডার সমতা প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশে সুইডেন দূতাবাসের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রথম সচিব এবং উপ-প্রধান মিসেস নাইওকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রোম বলেন, "বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই সমস্যাগুলি মোকাবেলার জন্য আমাদের যথাযথ পদ্ধতিগত সমাধান প্রয়োজন। এই ধরণের গবেষণার মাধ্যমে আমরা পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারি এবং স্থানীয় সরকার, নীতিনির্ধারক এবং তরুণদের সহায়তা নিশ্চিত করতে পারি। তাই এই গবেষণা এবং এর ফলাফলগুলি আমাদের পদ্ধতিগত পরিবর্তন এবং সঠিক সমাধান আনতে ব্যাপক নির্দেশনা দিতে পারে।"
খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার জলবায়ু-প্রভাবিত এলাকাগুলোতে পরিচালিত স্কোপিং স্টাডিতে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং পানির সংকটের মতো জলবায়ু-প্রভাবিত দুর্যোগসমূহ প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার, পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াস); এবং টেকসই জীবিকার ক্ষেত্রে বিশেষ করে নারী, কিশোরী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে তোলে।
টিএইচ