ঢাকা,

১৬ মে ২০২৫


টাঙ্গাইলে পুলিশে চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত ৫০ তরুণ-তরুণী

সাইফুল ইসলাম সবুজ, টাঙ্গাইল থেকে

প্রকাশিত হয়েছে: ১৮:৩৭, ১৫ মে ২০২৫

টাঙ্গাইলে পুলিশে চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত ৫০ তরুণ-তরুণী

ছবি: বিজনেস আই

টাঙ্গাইলে ঘুষ, সুপারিশ, হয়রানি ছাড়া অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন ৫০ তরুণ-তরুণী।

টাঙ্গাইলের গোপালপুরের শিমলাপাড়া গ্রামের মেঘলা রানী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। বাবা কাশী রাম দাস প্রায় দুই যুগ যাবত খাল বিল, নদ-নদীসহ বিভিন্ন জায়গা মাছ ধরেন। এতে কোন রকম পাঁচ সদস্যে সংসার চলতো মেঘলা রাণীদের। অন্য সহপাঠীদের পরিবারের মতো স্বচ্ছলভাবে না চললেও মেঘলা রানী ছিলো অনেক মেধাবী। ছোট বেলা থেকে পুলিশে চাকরি নিয়ে দেশের সেবা করার ইচ্ছাও ছিলো প্রবল। অবশেষে অবশেষে বুধবার রাতে টাঙ্গাইলে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মেঘলা রানী বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি ১২০ টাকায় নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। বর্তমান সময়েও যে ঘুষ ছাড়াও সরকারি চাকরি মিলে আমি তার দৃষ্টান্ত। আমিও বিনা স্বার্থে দেশের মানুষের সেবা করতে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা চাই।

শুধু স্বপ্ন রানী একা নয়, তার মতো ৫০ জনের শতভাগ মেধা যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে টাঙ্গাইলে টিআরসি পদের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কোনোরকম সুপারিশ বা অর্থ লেনদেন ছাড়াই বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছে সদ্য নিয়োগ পাওয়া পুলিশের সদস্যরা। বুধবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ লাইন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নরসিংদীর শিবপুর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মো. রায়হান সরকার, মানিকগঞ্জের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন প্রমুখ।

নিয়োগ প্রাপ্তদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও মিষ্টি মুখ করান পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই কৃষক, দিনমজুরসহ হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রয়েছে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার আনন্দিত সবাই। আবার অনেকেই ঘোষণা শোনে আনন্দে বুকফাটা কান্নাও করেন।টাঙ্গাইল সদরের হুগড়া এলাকার নুর মোহাম্মদ বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা স্বচ্ছল নয়। নিজেরাই পরিশ্রম করে এ পর্যন্ত এসেছি। যোগ্যতা ও সততা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি পাব, তা কখনো কল্পনাও করি নাই। পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি দেশের স্বার্থে কাজ করতে চাই।

নন্দবালা গ্রামের আসলাম মিয়া বলেন, ঘুষ ছাড়া পুলিশের চাকরিটা পাওয়ায় আমি ও পরিবারের সদস্য খুব খুশি। দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই।অপরজন মো. লিমন বলেন, ইতিপূর্বেও দুই বার পুলিশের মাঠে এসেছি। শেষ ধাপ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে। তবে পুলিশের চাকরি পেয়ে খুব ভাল লাগছে।কাশি রাম দাস বলেন, আমি খুব কষ্টে সংসার চালাতাম। আমার মেয়ে পুলিশের চাকরি পাওয়ায় আমার বুকটা আনন্দে ভরে গেছে। আমার মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।

নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা জানান, টাঙ্গাইলে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদের জন্য দুই হাজার ৭৭১ জন প্রার্থীকে প্রিলিমিনারি স্কিনিং শেষে বাছাই করা হয়। গত ৬ এপ্রিল শারীরিক মাপ ও কাগপত্র যাচাইয়ের জন্য এক হাজার ৫৩৩ জনকে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করা হয়। ৭ ও ৮ এপ্রিল শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের ৯৪১ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষা জন্য যোগ্য বিচেচিত হয়। ৪ মে ৯৩৭ জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিলে সেখানে ১৮৬ জন উত্তীর্ণ হয়। তাদের মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৪৫ জন পুরুষ ও ৫ জন নারীকে চুড়ান্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও ১০ জনকে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, দক্ষ, মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের খোঁজে বের করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া কার্যক্রম আমরা নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা নির্বিচ্ছিন্ন কাজ করেছি। কাজটি করতে পেরে নিজেদের অত্যান্ত সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, নিজেদের পেশাদারিত্ব, নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা দিয়ে। আগামীতে যারা আসবে, তারা যেন নৈতিকতা ও শারীরিক ফিটনেস এবং সর্বোচ্চ পেশা দারিত্ব দিয়ে দেশের স্বার্থে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

ইউ

News