ঢাকা,

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫


শিশু নির্যাতনের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধিতে অধিকার সংগঠনগুলোর গভীর উদ্বেগ

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ২১:১৫, ২৮ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ২১:২২, ২৮ আগস্ট ২০২৫

শিশু নির্যাতনের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধিতে অধিকার সংগঠনগুলোর গভীর উদ্বেগ

সারা দেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনার আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ যৌথ ভাবে। 

আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। 
আইন ও সালিশ কেন্দ্র বিবৃতিতে বলা হয়, (আসক) – এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে শিশু ধর্ষণের ঘটনা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আসকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩০৬ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১৭৫। এদের মধ্যে ৪৯ জন শিশুর বয়স মাত্র ০ থেকে ৬ বছরের মধ্যে এবং বাকিরা ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী। অন্তত ১৫২টি ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি, ফলে ধর্ষণের শিকার শিশুরা বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়াও বহু ঘটনা অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, এই ধর্ষণ মামলাগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশ ভুক্তভোগী ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু। শুধু মেয়েশিশুই নয়, ছেলেশিশুরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে ৩০ জন ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে (আসক)। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি, যা জনসম্মুখে কমই উঠে আসে।

পারিবারিক ও সামাজিক উভয় পরিবেশেই শিশুরা যে গভীর ঝুঁকির মধ্যে আছে, এই পরিসংখ্যানটি তার স্পট প্রমাণ।
অবিলম্বে যেসকল পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান- প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে এমজেএফ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারকে শিশু সুরক্ষা আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। 

সংগঠন গুলো কয়েকটি  সুপারিশ রেখেছে:
আইন প্রয়োগ ও জবাবদিহিতা জোরদার, শিশু ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনা দ্রুত ও সঠিকভাবে তদন্ত করা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা।
মামলার অগ্রগতির ওপর কড়া নজরদারির জন্য শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

শিশু সুরক্ষা বিষয়ক সমাজকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ১০৯৮ হেল্পলাইন ও শিশু সুরক্ষা ইউনিট (সিপিইউ) এর সেবা আরও শক্তিশালী করা।
ধর্ষণ মামলার তদন্ত ১৫ দিনের মধ্যে এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার সংশোধিত বিধান কার্যকর করা।
উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের শিশু কল্যাণ বোর্ডের তদারকি কার্যক্রম আরও জোরদার করা। 

শিশু-সংবেদনশীল বিচার ব্যবস্থা

নির্যাতনের শিকার শিশুদের মানসিক আঘাত (ট্রমা) কমিয়ে আনতে শিশু বান্ধব আদালত ও আইনগত প্রক্রিয়া তৈরি করা।
নির্যাতনের শিকার শিশু ও তাদের পরিবারকে আইনগত ও মানসিক সহায়তা প্রদান।

কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রতিরোধ ও সুরক্ষা

 সামাজিকভাবে শিশুর মর্যাদাহানি কমিয়ে আনতে সারা দেশে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো। সঙ্গে সঙ্গে শিশু অধিকার রক্ষায় সচেতনতা এবং দ্রুত আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে উৎসাহিত করা।

শিশুদের ঝুঁকি আগে থেকে বুঝে ব্যবস্থা নিতে কমিউনিটি-ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কমিটিগুলোকে আরও শক্তিশালী করা। কমিটিগুলো ঝুঁকি মোকাবিলা ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে। 

নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ

স্কুল ও মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়রানির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন।
গোপনে অভিযোগ করার ব্যবস্থা রাখা এবং নির্যাতনে জড়িত শিক্ষক বা কর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

জাতীয় শিশু সুরক্ষা কৌশল প্রণয়ন

আইন প্রয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সেবা সমন্বিত একটি বিস্তৃত জাতীয় কৌশল তৈরি ও বাস্তবায়ন।
হেল্পলাইন সম্পর্কে সচেতনতা ও ব্যবহার বাড়ানো

শিশু নির্যাতন সম্পর্কিত অভিযোগ যেন জাতীয় হেল্পলাইন ৯৯৯ ও ১০৯৮ – তে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়, সেই বিষয়ে জনসচেতনতা ও আস্থা বৃদ্ধি।
দায়িত্বশীল গণমাধ্যম

ধর্ষণের ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের সময় ভুক্তভোগীর সামাজিক মর্যাদাহানি এড়াতে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা।
এ সংক্রান্ত বিচার ও শাস্তির সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে অপরাধীদের জবাবদিহিতা ও আইনের শাসনে জোর দেওয়া।

শিশু ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা একটি জাতীয় সংকট। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে বহুমুখী একটি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যৌন নির্যাতনের পরিসংখ্যানে থাকা প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার একজন শিশু ও তার পরিবার, যারা ক্রমাগত সামাজিক মর্যাদাহানি, মানসিক আঘাত ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। এসব ঘটনা অপ্রকাশিত বা অমীমাংসিত থেকে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে শিশুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের ওপর।

নিরাপদ পরিবেশের অভাবে শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাদের জীবনে একটি স্থায়ী ক্ষত জায়গা করে নেয়। শিশুদের সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এটি আমাদের নৈতিক, আইনগত ও জাতীয় দায়িত্ব।

টিএইচ

News