ইরান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে সহযোগিতা করতে রাজি পাকিস্তান

ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যে ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পাকিস্তানের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এতে নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের এই সম্মতির প্রেক্ষিতে তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ইতোমধ্যে পাকিস্তান দূতাবাসে ৯০ জন বাংলাদেশির একটি তালিকা হস্তান্তর করেছে।

তেহরান ও ইসলামাবাদে অবস্থিত কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইরান থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশিদের ফেরানোর প্রস্তাবে পাকিস্তান নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাস পাকিস্তান দূতাবাসে একটি কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে।

বাংলাদেশিদের পাকিস্তানে প্রবেশের জন্য অনলাইনে ভিসা আবেদনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইরানে চলমান সংঘাতের কারণে ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত হওয়ায় অনলাইনে আবেদন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিশেষ বিবেচনায় অন-অ্যারাইভাল ভিসা অথবা পাসপোর্ট সরাসরি জমাদানের সুবিধা চেয়েছে।

ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসাইন খান বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইরানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের প্রথমে স্থলপথে পাকিস্তান সীমান্তে নেওয়া হবে। এরপর বেলুচিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করে করাচিতে পৌঁছানো হবে। সেখান থেকে দুবাই হয়ে বিমানযোগে ঢাকায় ফেরত আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

তেহরানে অবস্থানরত প্রায় ৪০০ বাংলাদেশির মধ্যে ১০০ জন ইতোমধ্যে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। অনেকেই নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তাসহ দূতাবাসের ৪০ জন সদস্য ও তাদের পরিবারকেও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রেডিও তেহরানে কর্মরত ৮ জন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ ২৭ জন, ১০-১২ জন শিক্ষার্থী এবং প্রায় ১০ জন পেশাজীবী বর্তমানে তেহরানে অবস্থান করছেন।
এছাড়া, ১৩ জুন যাদের দেশে ফেরার কথা ছিল, তারা বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছেন।

সারা ইরানে আনুমানিক ৬০০ জন দীর্ঘমেয়াদে বসবাসরত বাংলাদেশি, প্রায় ৮০০ জন অবৈধ অভিবাসী এবং মানবপাচারের ট্রানজিট হিসেবে অপেক্ষমাণ ৩০০-৫০০ জন বাংলাদেশি রয়েছে।

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশ ইতোমধ্যে তুরবত, পাঞ্জগুর ও গোয়াদার ইরানি সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এর ফলে সীমান্ত অতিক্রম করাতে বিশেষ কূটনৈতিক অনুমতির প্রয়োজন পড়ছে। একই সঙ্গে ইরানের আকাশপথও কার্যত বন্ধ রয়েছে, ফলে স্থলপথই আপাতত একমাত্র উপায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরত আনা হবে। কূটনৈতিক ও সরকারি পাসপোর্টধারীদেরও দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরানো জটিল হতে পারে।

তবে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশন আশাবাদী যে, পাকিস্তান সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও শিগগিরই পাওয়া যাবে।