বাড়লো মাধ্যমিক-কারিগরি ও মাদরাসায়. কমলো প্রাথমিকে

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দে এসেছে দৃষ্টিকটু বৈপরীত্য। একদিকে যখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা খাতে।

সোমবার (২ জুন) বিকাল ৩টায় ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ বাজেট ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের মূল বাজেটের (৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা) তুলনায় ৩ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কম। সংশোধিত বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ ছিল ৩৫ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরাদ্দ কমে যাওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষায় আর্থিক চাপ বাড়বে। এতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দুই বিভাগ-মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৩ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা বেশি।

কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। আগের বছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মাদরাসার সংখ্যা ৯ হাজার ২৫৬টি এবং শিক্ষার্থী ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৬২৬ জন, যা গত দুই দশকে সর্বোচ্চ।

প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৫ জন। আগের বছর ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১ জন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাসও বরাদ্দ কমানোর পেছনে একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

একদিকে প্রাথমিক শিক্ষায় অর্থ সংকটের শঙ্কা, অন্যদিকে অবহেলিত কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো—এই বৈপরীত্য শিক্ষা খাতে সরকারের অগ্রাধিকার পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শিক্ষানীতির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এসব পরিবর্তনের প্রভাব গভীরভাবে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।