নারায়ণগঞ্জে নাসিম ওসমান সেতুর পশ্চিম পাড়ে সংযোগ সড়কটি এখন এক ভয়াবহ গর্তে রূপ নিয়েছে। গর্তটা এমনই, একপাশ দিয়ে হেঁটে গেলে অন্য পাশে নেমে যাওয়া যায়। স্থানীয়রা বলছেন, "এখানে আরেকটু হলে পুরো সড়কই নদীতে পড়ত।"
গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়, হঠাৎ করেই সেতুর পশ্চিম পাড়ে সংযোগ অংশে মাটি ধসে যায়। শুরুতে বিষয়টিকে স্থানীয় কেউ গুরুত্ব দিতে চায়নি। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই দেখা গেল, ধসটা শুধু ধস নয়—এটা একটি দীর্ঘদিনের অবহেলার প্রতিফলন।
নাসিম ওসমান সেতুটি ২০১৯ সালে উদ্বোধন করা হয়। শীতলক্ষ্যার দুই পাড়কে যুক্ত করে নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দরের বিস্তীর্ণ জনগোষ্ঠীকে স্বস্তি দেওয়ার কথা ছিল এই সেতুর। কিন্তু বাস্তবতা হলো—সেতু হলেও এর পূর্ব পাশের সংযোগ সড়কটি আজও ‘অস্থায়ী’ অবস্থায় আছে। একাধিকবার কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি। ফলে বর্ষা এলে মাটি ধসে যায়, শুকনা মৌসুমে ধুলোয় পথচলা দুষ্কর।
স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ মিয়া বললেন, আমরা তো সেতু চাইনি, আমরা বলেছিলাম আগে রাস্তা ঠিক করো। এখন সেতু আছে, কিন্তু যাওয়া যায় না।”
প্রকৌশলীরা বলছেন, যেখানে ধস হয়েছে, সেটা ছিল পুরোনো একটি জলাধারের জায়গা। পানি সরে গেলেও নিচের মাটি নরম থেকেই গেছে। নিয়ম অনুযায়ী এখানে শক্ত ভিত্তির উপর রিটেইনিং ওয়াল দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডির এক প্রকৌশলী বললেন, এটা শুধু গাফিলতি না, এখানে অবকাঠামোগত দুর্বলতার সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। টেকসই সড়কের আগে প্রকৌশল সমীক্ষা করা হয়নি। এখন তো চোখে দেখা যাচ্ছে।”
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও সেতু বিভাগ—তিনটি সংস্থা মিলিয়ে সংযোগ সড়কটির কাজ তদারকি করছে। তবে কোন সংস্থা আসলে দায়ী, তা নিয়ে এখন চলছে ‘দায় এড়ানোর প্রতিযোগিতা’।
সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমাদের কাজ শুধু মূল সেতু পর্যন্ত। সংযোগ সড়কের দায়িত্ব এলজিইডির।”
অন্যদিকে এলজিইডির নারায়ণগঞ্জ অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাস্তার কিছু অংশ হয়তো আমাদের আওতায় ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেটা সিটি করপোরেশনের মধ্যে পড়ছে।”
সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে এক কর্মকর্তা বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।”
গর্তের পাশ ঘেঁষে চলছে যানবাহন। ঝুঁকি এতটাই বেশি যে একটু অসাবধান হলেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। গত শনিবার রাতে একটি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গর্তের কিনারায় আটকে যায়। চালক ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও যাত্রীরা আহত হন।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক হাসিনা পারভীন বলেন, আমার ছেলেটা প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যায়। সকালে মনে হয়, আজকে ঠিকমতো যাবে তো?
নাসিম ওসমান সেতু উদ্বোধনের সময় স্থানীয় সাংসদসহ একাধিক মন্ত্রী বলেছিলেন, এই সেতু নারায়ণগঞ্জের জন্য একটি মাইলফলক।” কিন্তু সেই
মাইলফলক’ এখন স্থানীয়দের কাছে এক ধরনের প্রতারণার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যোগাযোগ অবকাঠামোর যে দৃষ্টিনন্দন’ উন্নয়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার নীচে লুকিয়ে আছে পরিকল্পনার ঘাটতি, সমন্বয়হীনতা এবং অদূরদর্শিতা।
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে গর্তটি মেরামত করে স্থায়ীভাবে সড়কটির কাজ শেষ করতে হবে। সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে একযোগে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে নগর উন্নয়ন ফোরাম।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস মিলেছে যে, জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ শুরু হবে। তবে সেই জরুরি ভিত্তি’ কবে বাস্তবায়িত হবে, তার কোনো সময়সীমা নেই।
টিএইচ