ঢাকা,

১৫ মে ২০২৫


দ্বিতীয় দিনেও যমুনার সামনে অবস্থান জবি শিক্ষার্থীদের

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১২:০৫, ১৫ মে ২০২৫

দ্বিতীয় দিনেও যমুনার সামনে অবস্থান জবি শিক্ষার্থীদের

রাস্তার মাঝে কেউ শুয়ে আছেন, কেউ বসে; কেউ আবার গান গাইছেন তো কেউ হাততালি দিয়ে অন্যকে উজ্জীবিত রাখছেন। অনেকে আবার মেতেছেন খোশগল্পে, স্লোগানও দিচ্ছেন বা কবিতা পড়ছেন কেউ কেউ।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে এভাবেই কাকরাইল মসজিদের সামনে ৩ দফা দাবিতে অবস্থান নি‌তে দেখা যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের। রাতভর এখানেই অবস্থান করেছেন তারা।

জবির শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো— আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।

জবি শিক্ষার্থীদের চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে রাতভর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, শিবির, ছাত্র অধিকার ছাত্র ফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী সড়‌কে অবস্থান করছেন। সকালেও সেখানেই দেখা যায় তা‌দের।

শিক্ষার্থীরা বলেন, মার যখন খেয়েছি আরও খাবো, কিন্তু অধিকার আদায় না করে ক্যাম্পাসে ফিরব না।

জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে অন্যান্য ক্রিয়াশীল সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্রদলও রয়েছে। কাকরাইল মসজিদের ভেতর প্রায় ৫ শতাধিক আর বাইরে রাস্তায় অসংখ্য ছেলেমেয়ে অবস্থান করছেন। তারা বিপ্লবের গান গে‌য়ে সময় পার করছেন। রাস্তায় যখন নেমেছি রাস্তা থেকেই সব দাবির ফয়সালা হবে।’

দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দিনের মতো সড়‌কে জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

রাতভর রাস্তাতেই অবস্থান করেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দাবি ন্যায্য। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমরা সবসময় আপোষহীন। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে যমুনায় এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমার ভাইবোনকে আঘাত করেছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে আছি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি রাকিব বলেন, ‘যেহেতু রাজপথে আমরা নেমেছি, অধিকার আদায় না করে ফিরব না। মার যখন খেয়েছি, আরও খাব। তবে জবির শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করেই ছাড়ব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহীন আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু ক্যাম্পাস ছেড়ে এসেছি, আমাদের দাবি পূরণ না করে আর ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই না। এতে যদি আমাদের আরও এক সপ্তাহ এখানে থাকা লাগে, আমরা তাই থাকব।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সড়‌কে রাত কাটান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। ভোর ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড.মোশাররফ হোসেন ও ব্যাবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মোর্শেদ ভূঁইয়া। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাতভর তারাও সড়‌কে সময় পার করেন। এ ছাড়া রাত ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষকরাও সেখা‌নে উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ড. মোশাররফ বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা আছে, এজন্য আমি আছি। আমার ছেলেদের রেখে আমি যেতে পারি না। আমাদের দাবি যৌক্তিক।’

এর আগে (বুধবার) ‌বেলা ১১টার দি‌কে এই তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লং মার্চে শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

লং মার্চটি গুলিস্থান, মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে দুপুর সা‌ড়ে ১২টার দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সে সময় আন্দোলনকারী‌দের ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানিও ছোড়া হয়।

পরে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে তা‌দের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন।

পরবর্তীতে গতকাল রাতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সেখা‌নে বিফ্রিং করতে যান। তবে তার ব্রিফিংয়ে অসন্তুষ্ট হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে বোতল ছুঁড়ে মারেন একজন। এ ঘটনার পরে বিফ্রিং বন্ধ করে চলে যান উপদেষ্টা।

এদিকে, উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট জবির শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নেন তারা।

টিএইচ

News