
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস ও কোম্পানির সাথে বৈঠক বাতিলের দাবি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল ও গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসকদের।
অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের গুরুত্ব: চিকিৎসকদের ভূমিকা" শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় আজ মংগলবার ( ১৯ আগস্ট) সকাল ৯টায় রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের এটিএম হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে (৬ষ্ঠ তলা)।
গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এবং রিসার্চ ইন্সটিটিউট।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস এবং তামাক নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক চুক্তি WHO FCTC-এর আর্টিকেল ৫.৩ লঙ্ঘন করে তামাক কোম্পানির সাথে সরকারের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
সেমিনারে বক্তারা জানান, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির কোনো মতামত নেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এটি WHO FCTC-এর আর্টিকেল ৫.৩-এর সরাসরি লঙ্ঘন এবং দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই সরকারকে অবিলম্বে স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুমোদনের আহ্বান জানানো হয়।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন এবং আরও ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন আর বিলম্ব করা মানে জনস্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করা।
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা WHO FCTC-এর আর্টিকেল ৫.৩-এর প্রকাশ্য লঙ্ঘন। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, সরকার যেন দ্রুত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত সংশোধনী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করে।
সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়কারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন। এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু রোধে আইন সংশোধনে বিলম্ব অগ্রহণযোগ্য এবং এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ WHO FCTC-এর প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েও বর্তমানে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা জনস্বার্থবিরোধী। তামাক কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য মুনাফা, জনস্বাস্থ্য নয়। তাই এদের কোনো মতামত গ্রহণ করা মানেই জনস্বার্থকে উপেক্ষা করা।
অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ বলেন, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজীবন তামাকের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। ১৯৭০-এর দশকেই গণস্বাস্থ্যের সকল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এই ধারা জারি করেছেন যে, ধূমপায়ীদের চাকরির জন্য আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তিনি আশ্বাস দেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অতীতের মতো ভবিষ্যতেও তামাক নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করবে, এবং নিজেও এখন থেকে সক্রিয়ভাবে তামাক বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকবেন।
সেমিনারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সংশোধনী বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়— ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (DSA) বিলুপ্ত করে শতভাগ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহন ধূমপানমুক্ত করা; তামাক বিক্রয়স্থলে প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির CSR কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস থেকে কিশোর ও তরুণদের রক্ষা করা; স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা এবং খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. খোরশেদ আলম, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাঈদ-উজ-জামান, অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক, অধ্যাপক আকরাম হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশনস অফিসার আবু জাফরসহ বিভিন্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় সেমিনারটি আয়োজন করেছে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতাল।
টিএইচ