ঢাকা,

২১ আগস্ট ২০২৫


নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্বেগ

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৬:৪০, ১৯ আগস্ট ২০২৫

নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্বেগ

সম্প্রতি সংঘটিত দুটি মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। আজ মঙ্গলবার (  ১৯ আগস্ট)  এক বিবৃতিতে বলা হয়,  অভিযোগ উঠেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার সৈয়দা ফাহমিদা তাহসিন কেয়া (২৫) এবং গাজীপুরের জেমি আক্তারকে (১৯) তাঁদের স্বামী নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের নারীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী সংকটকে আরও প্রকট করেছে, যা গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যানুসারে, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩২২ জন নারী পারিবারিক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১৩৩ জন নারী স্বামীর দ্বারা নিহত হন। একই সময়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ স্বামীর নির্যাতনের অভিযোগে ৯ হাজারের  বেশি কল রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ নারী কোনো না কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যার অর্ধেকের বেশি স্বামী কর্তৃক সহিংসতার শিকার।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই অপরাধীরা বারবার এমন নৃশংস অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। অসংখ্য ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না এবং এমনকি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটলেও অভিযোগ দায়েরের অভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়।
তিনি কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সব মামলা পর্যালোচনা করে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে।

শাহীন আনাম আরও বলেন, নিম্ন আয়ের অনেক নারী সহিংস দাম্পত্য জীবন থেকে মুক্তি পান না। সামাজিক মর্যাদার ভয়ে এবং আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বাবা-মা তাঁদের মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে পারেন না। আর্থিক নিরাপত্তা না থাকায় সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় অসংখ্য নারী চুপচাপ পারিবারিক নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য হন। 

সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সমাজের প্রতি এমজেএফ’র আহ্বান:
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং আইনের সহজ ব্যাখ্যা প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

নারী নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, কাউন্সেলিং ও জীবিকা সহায়তা সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে।
যে সব বাধা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সমূহ ভুক্তভোগীদের নীরব করে রাখে তা চিহ্নিত করে দূর করতে হবে।

পারিবারিক সহিংসতাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি ভাঙতে জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালু করতে হবে।
কেয়া ও জেমির মর্মান্তিক মৃত্যু কোনোভাবেই নীরবতার আড়ালে চাপা পড়ে যেতে পারে না। এ ঘটনা আমাদের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা। অবিলম্বে বিচারহীনতার অবসান ঘটাতে হবে এবং নারীদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকারের সুরক্ষা দিতে হবে।

টিএইচ

News