
‘সংস্কৃতির ঐক্য মশাল অতিক্রম করবে ক্রান্তিকাল’ স্লোগানকে সামনে রেখে আজ ২৬ জুলাই বিকাল ৪টায় গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ‘কারফিউ ভাঙা গানের মিছিল’ স্মরণ করা হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট ছিলো গত বছর ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই দিনটি। কোটা আন্দোলনকারীদের উপর ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পুলিশ বাহিনী গুলি চালানোর পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তুঙ্গে উঠে। আন্দোলনকে দমন করতে নিপীড়ক আওয়ামী সরকার সারা দেশের জনগণের উপর একটি শ্বাসরুদ্ধকর কারফিউ চাপিয়ে দেয়। সেই রুদ্ধশ্বাস কারফিউর মধ্যেই ২৬ জুলাই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সামাজিক সংগঠনসমূহের নেতৃত্বে ‘প্রতিবাদী গানের মিছিল’ কর্মসূচিতে পুনরায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার জনতা ও শিক্ষার্থীরা নেমে আসে রাস্তায়। কারফিউ ভাঙা সেই গানের মিছিল থেকেই পুনরায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন শুরু হয় এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের নয়া সূচনা ঘটে। সেইদিনের গানের মিছিলের নেতৃত্বদানকারী প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ গণঅভ্যুত্থানের পরে ‘ গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য’ নামক একটি জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আজ সেই জোটের আয়োজনেই ঐতিহাসিক ২৬ জুলাইয়ের ‘কারফিউ ভাঙা গানের মিছিল’ স্মরণ করা হয়।
আজ কর্মসূচির শুরুতেই গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের নেতৃত্বে প্রেসক্লাব থেকে একটি গানের মিছিল শুরু হয়ে টিএসসি তে শেষ হয়। এরপর সোপার্জিত স্বাধীনতায় একটি আলোচনাসভা এবং সাংস্কৃতিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশের শুরুতে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে নিহত শিশুদের স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুস্মিতা রায়ের সঞ্চালনায় এবং গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের আহবায়ক ও বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সমাজ চিন্তা ফোরামের কামাল হোসেন বাদল, প্রগতি লেখক সংঘের দীনবন্ধু দাস, শ্রমিক নেতা আবদুল্লাহ আল কাফী এবং মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক ডাঃ হারুণ উর রশীদ।
সভায় বক্তারা বলেন, “দীর্ঘ ১৫ বছরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বৈষম্য ছিলো। লুন্ঠণ, হত্যা এবং গুম নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার ছিলো। উন্নয়নের লুটপাট, ফেসবুকে লেখার কারণে জেল, কারাগারে হত্যা এরকম একের পর এক জনবিরোধী ঘটনা ঘটেছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসন আমলে। তাই জনগণের লড়াই করা ছাড়া আর কোন রাস্তা ছিলো না। এই বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় শ্রমজীবি মানুষ জীবন দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনামলের অবসান ঘটিয়েছে। কিন্ত গণঅভ্যুত্থানের পরপরই বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কারণ গণঅভ্যুত্থানের পর যারা ক্ষমতায় আসীন হয়েছে, যারা একে মেটিকুলাস ডিজাইন বলেছে তাদের কেউই জনগণের এই ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের সাথে রাজপথে ছিলো না। তাই ফ্যাসিবাদী সরকারের অবসান ঘটলেও, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামোর অবসান হয়নি ”।
সভার সভাপ্রধান মফিজুর রহমান লাল্টু বলেন, ‘আজ এই সমাবেশ থেকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে সংরক্ষণ করতে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের পক্ষ থেকে আমরা কিছু দাবি জানাতে চাই। অবিলম্বে জুলাই হত্যাকারী আওয়ামীলীগের বিচার করতে হবে, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে হবে এবং অর্থপাচারকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের সকল গোপন চুক্তি প্রকাশ করতে হবে এবং সমস্ত রকম জনবিরোধী অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে। সকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে। পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করতে হবে এবং প্রতিটি জাতিগত নিপীড়ন ও হত্যার বিচার করতে হবে’। তিনি আরও দাবি জানান যে, ‘ভারতের ন্যায্য পানির হিস্যা বুঝে নিতে হবে, শিক্ষা সংক্রান্ত গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্রস্তাবিত দাবিগুলো মেনে নিতে হবে এবং গণসংস্কৃতিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে”। সবশেষে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে অবিলম্বে সুষ্ঠূ, নিরপেক্ষ, স্বাধীন এবং শ্রমিক-নারী-জাতিসত্তার প্রতিনিধিত্বে একটি নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান, অন্যথায় জনগণ পুনরায় ফ্যাসিবাদ উৎখাতের সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে।
আলোচনা সভা শেষে সংযোগাড়, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, উদীচী, ঢাকা ড্রামা, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কবি হাসান ফকরী, আবৃত্তিকার দীপক কুমার গোস্বামী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন।
টিএইচ