
ছবি: রাজাধানীর উত্তরায় বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমান...
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রায় পাঁচ দশকের সামরিক উত্থান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু এরই মাঝে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ বিমানের একের পর এক দুর্ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের মান নিয়ে।
? ইতিহাসের পেছনে ফিরে তাকানো
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (BAF) আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ট্রেনার জেট ও হেলিকপ্টার সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে কমপক্ষে ১০টির বেশি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত আটজন প্রশিক্ষক ও শিক্ষানবিশ পাইলট। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
? গুরুত্বপূর্ণ দুর্ঘটনাসমূহ:
-
২০১০ সালের ডিসেম্বর, বরিশাল: একটি PT-6 প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে দুই পাইলট নিহত হন।
-
২০১২, টাঙ্গাইল: Aero L-8 প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এক পাইলট নিহত এবং অপরজন গুরুতর আহত হন।
-
২০১৮ সালের জুলাই, যশোর: K-8W প্রশিক্ষণ বিমান নদীতে পড়ে যায়। দুইজন পাইলট প্রাণ হারান।
-
২০১৮ সালের নভেম্বর, টাঙ্গাইল: একটি F-7 ফাইটার ট্রেনার বিধ্বস্ত হয়। পাইলট নিহত হন।
-
২০২৪ সালের মে, চট্টগ্রাম: একটি Yak-130 প্রশিক্ষণ জেট কর্ণফুলী নদীতে পড়ে যায়। এক পাইলট নিহত, অপরজন উদ্ধার হন।
-
২০২৫ সালের জানুয়ারি, টাঙ্গাইল: Aero L-39 Albatros ট্রেনার বিমান দুর্ঘটনায় এক পাইলট অফিসার নিহত হন, একজন স্কোয়াড্রন লিডার আহত হন।
? সর্বশেষ ও ভয়াবহতম দুর্ঘটনা: জুলাই ২০২৫
২০২৫ সালের ১৮ জুলাই সকালে ঢাকার উত্তরার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ–এর ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি F-7 BGI প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। এ ঘটনায় স্কুলের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীসহ অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ১০০+ আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, "বিমানটি হঠাৎ করে নিচে নামতে শুরু করে এবং স্কুলের ভবনের ওপরে বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তেই আগুন ও ধোঁয়ায় পুরো এলাকা ঢেকে যায়।"
এই দুর্ঘটনাকে বাংলাদেশে সামরিক বিমানের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
? বিশ্লেষণ: কেন বাড়ছে দুর্ঘটনা?
বিমান বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সূত্র এবং বিশ্লেষকদের মতে, দুর্ঘটনার পেছনে যেসব কারণ রয়েছে:
-
✈️ পুরনো এবং সীমিত প্রযুক্তির বিমানের ব্যবহার
-
⚙️ পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি
-
?✈️ প্রশিক্ষণ বিমানের লো-ফ্লাইট সেফটি স্ট্যান্ডার্ড
-
? পর্যাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারিং নজরদারি ও রুটিন চেকের ঘাটতি
?️ প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিমান বাহিনীর এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত করছি এবং ভবিষ্যতে যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।”
? জনমত ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট নাগরিকরাও এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা কাঠামোর উন্নয়ন দাবি করেছেন।
✍️ উপসংহার
বাংলাদেশের জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি গর্বের অংশ হলেও, একের পর এক প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা তা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। পাইলটদের জীবন রক্ষা এবং বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় সময়োপযোগী পরিবর্তন আনা আবশ্যক।
ইউ