
তেহরান এখন আর আগের মতো নিশ্চিন্ত শহর নয়। ইসরায়েলি বোমা হামলার আতঙ্কে তেহরান ছাড়ছেন অনেক বাসিন্দা। কেউ যাচ্ছেন একা, কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ আবার গর্ভবতী স্ত্রী বা বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে। আর শহর ছাড়ার আগে ঘরের সজানো-কোচানো চেনা পরিবেশটাকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করছেন নিজেদের বাড়ির ‘শেষ ছবি’।
এই ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে খালি সোফা, জানালার পাশে রাখা গাছ, গুছিয়ে রাখা লাগেজ, বইয়ের তাক কিংবা কাজের ডেস্ক। ছবির সঙ্গে লেখা থাকছে—“শেষ ছবি”, “বিদায়” বা “আবার কখনো দেখা হবে কি না জানি না”। অনেকেই বলছেন, শহর ছাড়ার আগে জানালার পর্দা টেনে, গাছগুলোতে পানি দিয়ে, ঘরটাকে সাজিয়ে তবেই রওনা হয়েছেন তারা।
তেহরান ছেড়ে যাওয়ার কারণ একটাই—নিরাপত্তাহীনতা। যুদ্ধ যতই সামরিক স্থাপনাগুলোকে কেন্দ্র করে শুরু হোক, তা এখন আবাসিক এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী ছেড়ে বের হওয়ার সড়কে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ যানজট, তেলপাম্পে লম্বা লাইন, আর আতঙ্কিত মানুষের মুখ।
তবে সবাই যে শহর ছাড়ছেন তা নয়। কেউ বলছেন, যাব কোথায়? কেউ বলছেন, জীবন গড়েছি এখানেই—যা হবে এখানেই হবে। কারও পরিবার বাইরে নেই, কেউ আবার দীর্ঘ রাস্তায় ঝুঁকি নিতে চান না। কেউ বলছেন, “যদি ফিরেই দেখি সব ধ্বংস, তবে নতুন করে শুরু করার শক্তি আর নেই”।
দেশের বাইরে থাকা প্রবাসী ইরানিরাও উদ্বেগে আছেন। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা—ইন্টারনেট—যেটা অনেক সময় কেটে যায়। তাদের মেসেজে অনেক আত্মীয় বলছেন, “চলে যেতে বলো না, যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আমাদের।”
তেহরান শহর এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। কেউ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, কেউ থেকে যাচ্ছেন। তবে সবাই মিলে এক রকম বিদায় জানাচ্ছেন পরিচিত জীবনের এক শান্ত অধ্যায়কে—স্মৃতির খাতায় রেখে যাচ্ছেন নিজেদের সাজানো ঘরের শেষ ছবি। বিবিসি বাংলা
ইউ