ঢাকা,

০৫ অক্টোবর ২০২৫


সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ: নীতি ও পরিকল্পনা প্রস্তাবনা” শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপ

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৯:৫৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ: নীতি ও পরিকল্পনা প্রস্তাবনা” শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপ

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-র উদ্যোগে  শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে “বাংলাদেশের সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ: নীতি ও পরিকল্পনা প্রস্তাবনা” শীর্ষক ‘পরিকল্পনা সংলাপ’ বিআইপি কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।

বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান-এর সঞ্চালনায় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিআইপির যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য পরিকল্পনা পেশাজীবী ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ আলোচকবৃন্দ তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন।  

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-র যুগ্ম সম্পাদক, পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম, স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত নগরায়নের দিকে এগোচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৪০% মানুষ শহরে বসবাস করছে এবং আগামী দুই দশকে এটি ৬০% ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে নগরায়ণ মূলত ঢাকা ও আংশিকভাবে চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় ঢাকায় ঘনবসতি, যানজট, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংকট এবং পরিবেশগত চাপ বেড়েছে।

আঞ্চলিক শহরগুলো যেমন খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর এবং উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না থাকার কারণে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য দেখা দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, এসকল সমস্যা নিরসনে সমগ্র বাংলাদেশে সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিতকরণের বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।  

পরিকল্পনাবিদ মোঃ আনিসুর রহমান তুহিন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসালটেন্ট এবং ফেলো মেম্বার, বিআইপি, সংলাপের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে নগরায়ণ ৬০-এর দশকে শুরু হয়; সেই সময় নগরায়নের হার ছিল মাত্র ৫.১৪%, যা ৯০-এর দশকে বেড়ে ১৯.৮% এবং ২০২৩ সালে প্রায় ৪০% এ পৌঁছেছে। তিনি উল্লেখ করেন, নগরায়ণকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ সহ বিভিন্ন বিকল্প পন্থা প্রয়োগ করা যেতে পারে।      

এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, থাইল্যান্ড এর এমেরিটাস অধ্যাপক এবং বিআইপির সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক ড. এ টি এম নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণীর মাঝে আয়ের বৈষম্যের অন্যতম কারণ হলো অর্থনীতি ভিত্তিক এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা। প্রতিটি ফেডারেল শাসনব্যবস্থা মূলক দেশে প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব পরিষদ, আইনসভা ও মুখ্যমন্ত্রী থাকার ফলে একটি কাঠামো তৈরি হয় যা বিকেন্দ্রীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করে। এর ফলে রাজনৈতিক চাপ হ্রাস পায় এবং শহরের নগরায়ণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা পাওয়া যায়। তিনি মনে করেন, এভাবে বাংলাদেশেও প্রসাশনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সুষম নগরায়ন ও পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব।    

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর এর সিনিয়র প্ল্যানার এবং উপপরিচালক পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বলেন, সকল প্রশাসনিক কাঠামোকে সম্পূর্ণ বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব নয়। জলবায়ু-প্রবণ মানুষদের নগরমুখী প্রবণতা ঠেকাতে রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি সুষম অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আরো বলেন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘ন্যাশনাল স্প্যাশিয়াল প্ল্যানিং’ আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে তৈরি করা হবে। 

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, কার্যকর ও বাস্তব ভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সারাদেশে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপরিহার্য। তিনি উল্লেখ করেন, অঞ্চল ভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি না হলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কার্যকর করা কঠিন হবে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রিতা কমানো এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করলে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। রাষ্ট্র যদি অঞ্চল ভিত্তিক সুষম শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে, তবে রাজধানী সহ প্রধান শহরগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-র সহ-সভাপতি ১, পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন বিআইপির উদ্যোগে প্রণীত ‘জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা কাঠামো (National Spatial Planning Framework)’ বাংলাদেশের সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণে কীভাবে সহায়ক হতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, সুষম নগরায়ন ও বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণও জরুরি।

পূর্ববর্তী পরিকল্পনাগুলো মূলত অর্থনৈতিক লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হলেও নগর ও উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে হবে দেশের জনগণের কল্যাণ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়নের জন্য। সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে সাংস্কৃতিক বাধা দূর করে এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে সরে এসে জনকল্যাণের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লিমিটেড (ডিডিসি)- র পরিবেশ ও পরিবহন পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সুষম নগরায়ন নিশ্চিতকরণে উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ অনেক আগে থেকে নেওয়া উচিত ছিল। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই পরিকল্পনা সংলাপে উপস্থিত পরিকল্পনা পেশাজীবী ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সুষম নগরায়ন ও বিকেন্দ্রীকরণের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-র কোষাধ্যক্ষ পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. মোঃ মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, বাংলাদেশের সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ জন্য নতুন শহর নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। বরং ঢাকার আশেপাশের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ও মানিকগঞ্জের মতো শহরগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি এবং দেশের বিভিন্ন জেলা শহর ও পৌরসভাগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. ফরহাদুর রেজা তার বক্তব্যে উপযুক্ত গবেষণার মাধ্যমে ‘Comprehensive Regional Disparity Index’ তৈরি করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও জানান, স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষতা উন্নয়ন এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা না গেলে বিকেন্দ্রীকরণের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় এই বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। 
স্থানিক পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব বলে উল্লেখ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন এর অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. ফৌজিয়া ফারজানা।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারী সরকারী ব্যবস্থার প্রভাব দূর করতে এবং সুষম নগরায়ন নিশ্চিত করতে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এজন্য ‘National Spatial Planning Framework’ এর উন্নয়ন এবং কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। 
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, ঢাকায়  মানুষের অযাচিত ভীড় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো নিরুপণ করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি, স্থানীয় ও আঞ্চলিক বৈষম্যগুলো চিহ্নিত করে তা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরতে হবে, যাতে আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে এসব বিষয় গুরুত্ব পায়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সুষম নগরায়ন নিশ্চিতকরণ এবং উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য পরিকল্পনাবিদদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, বাংলাদেশের সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিতকরণে বিআইপি এই ধরনের সংলাপ ও সেমিনার নিয়মিতভাবে আয়োজন করবে। উক্ত সংলাপ ও সেমিনারে পরিকল্পনা পেশাজীবী ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ হতে প্রাপ্ত মতামত ও সিদ্ধান্তসমূহ একত্রিত করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরা হবে, যেন আগামী নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ গুরুত্ব পায়। 

সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)-এর সভাপতি, পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত বর্তমান সরকার উন্নয়নের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মুখে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বললেও বাস্তবে তারা ঢাকার উন্নয়ন কেন্দ্রিক কর্মকান্ডেই সীমাবদ্ধ থাকেন।  তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার এখন সময়ের দাবি।

প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে প্রতিটি জেলায় সুষম উন্নয়ন ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা হলে ঢাকার ওপর চাপ কমানো যাবে। এ জন্য জেলা বাজেট প্রবর্তন জরুরি, যাতে কোনো সরকার উন্নয়ন বৈষম্য সৃষ্টি করতে না পারে।   
পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান আরও উল্লেখ করেন, কর্মসংস্থানের অনুকূল পরিবেশ ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটালে মানুষকে ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা সম্ভব। পাশাপাশি প্রতিটি জেলার জন্য পৃথক পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি, সরকারের সকল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ সমন্বিতভাবে কাজ না করলে বাংলাদেশের সুষম নগরায়ন ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।   

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইপি বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ উসওয়াতুন মাহেরা খুশি, পরিকল্পনাবিদ হোসনেআরা, পরিকল্পনাবিদ আবু নাইম সোহাগ সহ নাগরিক ও পরিকল্পনা পেশাজীবীগণ।

টিএইচ

News