
ফাইল ছবি
ভাষা, সাহিত্য ও মানবতার আজীবন সাধক ভাষাসংগ্রামী, কবি ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক-কে আজ শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানিয়েছে জাতি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁর মরদেহ সেগুনবাগিচার বারডেম হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। জীবনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী, মানবকল্যাণ ও জ্ঞানের প্রতি দায়বদ্ধতার এক অনন্য নজির স্থাপন করে তিনি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য তাঁর শরীর দান করে গেছেন।
শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা ও দেহদান
-
শ্রদ্ধা নিবেদন: শনিবার সকাল ১১টার দিকে রোদ্রস্নাত বিষণ্ন সকালে তাঁর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিমূলে আনা হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ, সংগঠন ও শুভানুধ্যায়ীরা তাঁর কফিন ফুলে ফুলে ঢেকে দেন।
-
শোকযাত্রা: শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একটি শোকযাত্রার মধ্য দিয়ে মরদেহ বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ভক্ত, অনুরাগী ও সহযোদ্ধারা শেষবারের মতো তাঁকে ঘিরে দাঁড়ান।
-
দেহদান: এরপর তাঁর মরদেহ হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। তাঁর শেষ ইচ্ছানুযায়ী, এই দেহ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হবে।
-
অনন্য নজির: মরদেহ দানের মাধ্যমে আহমদ রফিক জীবনের শেষ অধ্যায়েও সমাজ ও জ্ঞানের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
গুণীজনের স্মৃতিচারণ: ‘ভাষা থেকে মানুষ- তিনি ছিলেন সমাজ রূপান্তরের সাধক’
আহমদ রফিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সংস্কৃতিজনেরা তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
-
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: তিনি আহমদ রফিককে ‘সমাজ রূপান্তরের সাধক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বলেন, ভাষা সংগ্রামী হিসেবে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখেছেন এবং রবীন্দ্রনাথের ওপর তাঁর গবেষণা আমাদের সাংস্কৃতিক পরিসরকে সমৃদ্ধ করেছে।
-
গবেষক মফিদুল হক: তিনি বলেন, আহমদ রফিক আজীবন ন্যায়ের পক্ষে থেকেছেন এবং মানুষের মুক্তির জন্য লড়েছেন। দেশভাগের যন্ত্রণা থেকে তিনি আজন্ম সম্প্রীতির সমাজ গড়ার সাধনা করে গেছেন।
-
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম: তিনি বলেন, আহমদ রফিক ছিলেন সেই বিরল মানুষদের একজন, যিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত আদর্শকে বহন করে চলেন। সম্পত্তি দান করে তিনি মানবতার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
-
আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন: তিনি আহমদ রফিকের নিঃসঙ্গ জীবন ও চিকিৎসার অর্থসংকটের কথা উল্লেখ করে শিল্প-সাহিত্যের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
-
অধ্যাপক ভীস্মদেব চৌধুরী: তিনি মনে করিয়ে দেন, আহমদ রফিক ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন না এবং শহীদ মিনারের প্রথম নির্মাতাদের একজন ছিলেন তিনিই।
সংরক্ষণ ও প্রচারের আহ্বান
আহমদ রফিক ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুনীর সিরাজ জানান, তাঁর জীবন নিঃসঙ্গ হলেও সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন অফুরন্ত। পরিবারের সদস্য রেহেনা আক্তার ঝর্ণা জানান, এত মানুষের শ্রদ্ধা তাঁদের জন্য সান্ত্বনা। ভাগ্নে হুমায়ূন কবির সকলের প্রতি তাঁর কাজগুলো সংরক্ষণ ও প্রচারের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
শ্রদ্ধার মিছিল
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা অসংখ্য সংগঠনের মধ্যে ছিল সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ছায়ানট, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, ছাত্র ইউনিয়ন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
ইউ