
ফাইল ছবি
নির্মাণখাতের শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও তাদের নিরাপত্তার দিকে খুব কমই নজর দেয়া হয়। দেশের বিভিন্ন শহরের নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করা শ্রমিকদের পরিবেশ বেশিরভাগ সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ, যেখানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম নেই এবং নির্মাণ সাইটগুলোতে শর্তগুলো আদৌ মানা হয় না। হেলমেট, গামবুট, নিরাপত্তা বেল্টের মতো প্রাথমিক সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই শ্রমিকরা কাজ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা: ২০২৪ সালের ১৫ এপ্রিল ঢাকা শহরের সবুজবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে নিচে পড়ে তিন নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। তারা মাচান থেকে দেওয়াল প্লাস্টারের কাজ করছিলেন। এ দুর্ঘটনাটি নির্মাণশ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার চিত্র স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। দেশের প্রতিটি নির্মাণ সাইটে এমন দুর্ঘটনা ঘটে চলছে, যা গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, উঁচু স্থানে কাজ করার সময় লিফট, সেফটি বেল্ট, শক্ত দড়ি-মাচা ব্যবহার এবং মাথায় হেলমেট, পায়ে গামবুট ও মুখে মাস্ক ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব নির্দেশনা খুব কম ক্ষেত্রেই পালন করা হয়। সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্টের (সেরিড) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের নির্মাণখাতে ৪৯ শতাংশ শ্রমিক সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করেন না।
এছাড়া, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) ২০২৪ সালের মার্চ মাসে কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসম্মত কর্ম পরিবেশ, বাসস্থান, রেশনিং ব্যবস্থাসহ ১২ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য কল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রহণ, শ্রম আদালত স্থাপন, এবং নারী শ্রমিকদের সমকাজে সমমজুরি নিশ্চিত করা।
এমন পরিস্থিতিতে নির্মাণশ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। আইন ও বিধিমালা বাস্তবায়ন, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। শুধু আইন নয়, নৈতিকভাবে নির্মাণশ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত, যাতে তাদের জীবন ও কাজের পরিবেশ আরও নিরাপদ হয়।
ইউ