ঢাকা,

০২ মে ২০২৫


বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস ও বর্তমান

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১৮:২৫, ১ মে ২০২৫

বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস ও বর্তমান

ফাইল ছবি

আজ ১ মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিনটি পালিত হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার হিসেবে। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন, যেটি পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার পর থেকে প্রতি বছর ১ মে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশে মে দিবসের তাৎপর্য অনেক গভীর। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে মে দিবস সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে এই দিনটি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনের ধারা পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) নামে একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন গড়ে উঠেছিল, যা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুগত শ্রমিক সংগঠনগুলো স্কপের কার্যকারিতা নষ্ট করেছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলন বিভিন্ন খাতে ছড়িয়ে পড়েছে। গার্মেন্টস, পরিবহন, পাটকলসহ বিভিন্ন খাতে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে আসছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস খাতে ২০১৩ সালের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়া হয়। তবে বাস্তবে শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ে অনেক সময় বাধার সম্মুখীন হন। তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়, মামলা দায়ের করা হয় এবং ভীতি সঞ্চার করা হয়।

বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস ও বর্তমান চিত্র তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষের কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ ও ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শ্রমিকের অধিকার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ভূমিকা রাখবেন। উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন।’

তবে বাস্তবতা হলো, শ্রমিকরা এখনো তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। নারী শ্রমিকরা সমান কাজ করেও সমান মজুরি পান না, শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেশি এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকরা আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া, শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

মে দিবসের এই দিনে আমাদের উচিত শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। শুধু আইনের কাগুজে রূপ নয়, বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হলে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

News