ঢাকা,

১০ জুলাই ২০২৫


হুতিদের হামলায় লোহিত সাগরে জাহাজডুবি : নিহত ৪, নিখোঁজ ১৫

বিজনেস আই রিপোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে: ১১:২৫, ১০ জুলাই ২০২৫

হুতিদের হামলায় লোহিত সাগরে জাহাজডুবি : নিহত ৪, নিখোঁজ ১৫

লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের হামলায় একটি পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে গেছে। এই ঘটনায় ছয়জন নাবিককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আরো ১৫ জন এখনো নিখোঁজ। ইরান-সমর্থিত হুথিগোষ্ঠী জানিয়েছে, তারা কিছু নাবিককে আটক করেছে।

‘এটারনিটি সি’ নামের লিবারিয়ান পতাকাবাহী কার্গো জাহাজে মোট ২৫ জন নাবিক ছিলেন।

হামলার সময় চারজন নিহত হন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মেরিটাইম নিরাপত্তা সংস্থা। বাকি নাবিকরা জাহাজ ত্যাগ করেন। জাহাজটি গতকাল বুধবার সকালে ডুবে যায়, এর আগে পরপর দুই দিন হামলার শিকার হয়েছিল।

উদ্ধার হওয়া ছয়জন নাবিক সমুদ্রে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ভেসে ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে নিযুক্ত তাদের মিশন থেকে হুতিদের অভিযুক্ত করে জানানো হয়েছে, তারা জীবিত নাবিকদের অপহরণ করেছে এবং দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।

হুথিদের সামরিক মুখপাত্র এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেন, ‘ইয়েমেন নৌবাহিনী জাহাজটির কয়েকজন নাবিককে উদ্ধার করে, চিকিৎসাসেবা প্রদান করে এবং নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।’ হুতিরা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে ‘এটারনিটি সি’-তে হামলার দৃশ্য ও বিস্ফোরণের চিত্র দেখা যায়।

ভিডিওটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।

এই ছাড়াও, রবিবার আরেকটি লিবারিয়ান পতাকাবাহী জাহাজ ‘ম্যাজিক সিস’ হুতি হামলার শিকার হয়, তবে ওই জাহাজের সব নাবিক নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হুতিরা ১০০টির বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতির অংশ। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ২০২৫ সালের মে মাসে হুতিদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে হামলা বন্ধ করতে, তবুও হুতিরা জানিয়েছে এই চুক্তি ইসরায়েলকে ছাড় দেয়নি।

আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব শিপিং এবং বিআইএমসিও এক যৌথ বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘নিরীহ বেসামরিক নাবিকদের জীবনের প্রতি নিষ্ঠুর অবজ্ঞা’ বলে অভিহিত করেছে এবং লোহিত সাগরে কঠোর নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছে।

গ্রিসভিত্তিক নিরাপত্তা সংস্থা ডায়াপলাস জানিয়েছে, ‘আমরা শেষ আলো পর্যন্ত নিখোঁজ নাবিকদের খোঁজ চালিয়ে যাব।’ লোহিত সাগরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত বাব আল-মান্দাব প্রণালী হয়ে প্রতিদিন জাহাজ চলাচলের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ৮ জুলাই এ সংখ্যা ছিল ৩০, যা ১ জুলাই ছিল ৪৩টি। জ্বালানি তেলের দামও এই হামলার কারণে বেড়ে গেছে, যা ২৩ জুনের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

একাধিক হামলার বিবরণ

‘এটারনিটি সি’ প্রথম হামলার শিকার হয় গত সোমবার। জাহাজটিতে সমুদ্র ড্রোন এবং স্পিড বোট থেকে রকেট চালিত গ্রেনেড ছোড়া হয়। হামলায় লাইফবোটগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। পরদিন মঙ্গলবার জাহাজটি আরেকবার হামলার শিকার হয়, এরপর নাবিক ও নিরাপত্তাকর্মীরা জাহাজ ত্যাগ করেন।

জাহাজে ২১ জন ফিলিপাইনের নাগরিক, একজন রুশ এবং তিনজন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী ছিলেন। এদের মধ্যে একজন গ্রিক এবং একজন ভারতীয়, যিনি উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের একজন। জাহাজটির পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কসমোশিপ ম্যানেজমেন্ট এখনো হতাহতের বিষয়ে কিছু জানায়নি। এই চার মৃত্যুর ঘটনা যদি নিশ্চিত হয়, তবে জুন ২০২৪ সালের পর থেকে লোহিত সাগরে হামলায় এটি হবে প্রথম প্রাণহানি। গ্রিস এবং সৌদি আরবের মধ্যে এই হামলা নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র : রয়টার্স

টিএইচ

News