
কোনো শিশু সহিংসতার শিকার হলে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড হেল্প লাইন ১০৯৮ নাম্বারে ফোন করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২৪ ঘন্টা এই সেবা পাওয়া যায় জানালেন সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ( অতিরিক্ত সচিব) মো. সাইদুর রহমান খান।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) লোকাল এডুকেশন এন্ড ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের আয়োজনে ওয়াশপুরে
লিডো স্পিচ হোমে বিকেলে " আর্ট ফটোগ্রাফি এন্ড কালচারাল ইভিনিং ভালনারেবল চিলড্রেন এন্ড সারভাইভরস" শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ( অতিরিক্ত সচিব) মো. সাইদুর রহমান খান এ কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন বিশেষ অতিথি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, এসওএস চিল্ড্রেন্স ভিলেজ, বাংলাদেশের (আ্যডভোকেসি) উপ পরিচালক নুসরাত জাহান, ৭ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা এবং ম্যানেজিং ওয়ার্কার ( সুধা),সোশ্যাল আক্টিভিস্ট রেজাউল করিম খোকন।
স্বাগত বক্তব্য দেন লিডোর ইয়াং জার্নালিস্ট চেঞ্জমেকার সদস্য হাসান আলী মুসাফির ও মাহফুজা সুলতানা মুন্নি। সমাপনী বক্তব্য দেন লিডোর নির্বাহী পরিচালক মো. ফরহাদ হোসেন। এছাড়াও বক্তব্য দেন হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নির্বাহী প্রধান মাহাবুল হক, ড্যাফোডিল চাইল্ড হোমের প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এই কর্মসূচিগুলো মনিটরিং এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেসাথে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারেও উদোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নে যে কাজগুলো হচ্ছে, সেই কাজগুলোতে উৎসাহ দেওয়া, শিশুদের পুষ্টির নিশ্চয়তা করা সরকারের দায়িত্ব। কারণ সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সমন্বিতভাবে কাজ করতে আগ্রহী। শিশু সুরক্ষা ইউনিটের মাধ্যমে এই কাজ করতে পারি। কারণ বিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করলে প্রকল্প সাফল্যের মুখ দেখবে না।
সিটি করপোরেশনের আওতায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে সরকারি - বেসরকারি যৌথ উদোগে কোনো প্রকল্প তৈরি করলে সরকার ৬০ শতাংশ, বেসরকারি সংস্থা ৪০ শতাংশ সহযোগিতা করবে। সিটি করপোরেশনের বাইরে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে সরকারি - বেসরকারি যৌথ উদোগে কোনো প্রকল্প তৈরি করলে সরকার ৮০ শতাংশ, বেসরকারি সংস্থা ২০ শতাংশ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করবে।
মফিদুল হক বলেন, নিডো পরিবারের সদস্য মুন্নি আমাদের কাছে একটি প্রশ্ন রেখেছে, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর শিশুরা পথশিশু হয়ে কেনো রাস্তায় ঘুরবে! এর জবাব আমাদের কাছে নেই। কিন্তু আমাদেরকে এর জবাব দিতে হবে। আমরা যদি বলি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাহলে এই সত্যিটাও ভুলতে পারি না। কারণ ৫৪ বছরের আগের মুক্তিযুদ্ধের সাথে আজকের শিশুদের সম্পর্কের অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তখন মুক্তির জন্য নিরন্তর সাধনা ছিল।
অন্য দিকে বলতে গেলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় এই শিশুদের জন্য অনেক ধরনের কর্মসূচি সরকারের নেওয়া রয়েছে। কিন্তু এই কর্মসূচির সাথে সমাজের যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি।
তিনি বলেন, শিশু পল্লীর প্রতিষ্ঠাতা আরমান মেনার যুদ্ধে এক বোন ছাড়া পরিবারের সব সদস্যদের হারিয়েছিলেন। বড় হয়ে তিনি অনাথ শিশুদের ভবিষতের কথা ভেবে নানারকম কাজ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশে এসে যুদ্ধ শিশু, অনাথ শিশুদের জন্য শিশু পল্লী প্রতিষ্ঠা করেন। এই শিশুরাই যারা বড় হচ্ছে তারাই এগিয়ে নিয়ে যাবে কাজগুলো।
তিনি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এর ' সুলতানার স্বপ্ন ' সম্পর্কে বলেন, এটি ইউনেস্কো মেমোরি অব দা ওয়াল্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ডকুমেন্ট তৈরি করেছি। দেশ- বিদেশে এ তথ্য আমাদের জানানো দরকার।
মফিদুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ২৫ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো উদোগ সরকারের ছিল না। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ড মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের উদোগ নিয়েছিল। এই উদোগে যদি দেশের মানুষ - সমাজের কোনো সমস্যা না হয়, সমাজ যদি এগিয়ে আসে তাহলে সম্ভব মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ। এজন্য আমরা বলি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বাংলাদেশের মানুষ দ্বারা নির্মিত। এটি জনগণের প্রতিষ্ঠান বলে অভিহিত করেন তিনি। তিনি ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হকের বীরত্বের কথা তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ইপিআর সৈনিকদের সাথে নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেন। নিউজ উইকে ছবিসহ তার সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়েছিল। তাঁর পরনে ছিল লুঙ্গি ও শার্ট। তিনি একমাত্র সেক্টর কমান্ডার যিনি সড়ক দুর্ঘটনায় শহিদ হয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, লিডোর সাথে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কিভাবে যোগাযোগ বাড়ানো যায় এ নিয়েও কাজ করছি।
রেজাউল করিম খোকনের মতে, কারওয়ান বাজারে রাতে যে শিশুরা ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করে তারাও সরকারকে কর দেয় টুথপেষ্ট ব্যবহার করায়। কাজে তাদের ভবিষ্যতের কথা ও সরকারকে ভাবতে হবে।
নুসরাত জাহান জানান, শিশুদের কথা শুনতে হবে। তাদের মতামত প্রকাশ করা।এবং শ্রোতারা তাদের স্বপ্ন গুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন এর উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে হাসান আলী মুসাফির বলে, শিশুদের কন্ঠস্বর তুলে ধরার জন্য আমরা সাংবাদিকতা করছি।
মাহফুজা সুলতানা মুন্নি জানান, দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রশান্তির জায়গা লিডো। ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পাই, কিভাবে স্বপ্নের ভেতর দিয়ে এগুতে হয়।
সমাপনী বক্তব্যে ফরহাদ হোসেন বলেন, এই শিশুদের ভালো রাখা আমাদের লক্ষ্য। সরকার আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আগামীতে পাশে থাকবে।
আলোচনা শেষে শিশুরা সংগীত পরিবেশন করে।
টিএইচ